মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: প্রবেশপথ, খেলারমাঠ, নামাজঘর, শহীদ চত্বর, শ্রেণি কক্ষ সবখানেই থৈথৈ হাঁটু সমান পানি। সড়কে জমে থাকা পানিতে সাঁতার কাটছে কয়েকজন শিশু। চাকুরি বাঁচাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা আসলেও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা। সুনসান নিরাবতা। যাঁরা এসেছেন। তাঁদের কেউ হাঁটু সমান ভিজে, কেউবা ভ্যানে চরে চলাচল করছে। আজ বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী সরকারি কলেজে সরেজমিন গিয়ে দুর্ভোগের এমন চিত্র দেখা যায়।
শিক্ষকদের ভাষ্য, দখল দুষণে ভরাট হয়ে গেছে আশপাশের পানি প্রবাহের পথ। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কলেজের সবখানে থৈথৈ পানি। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা কলেজে না আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
একাদশ শ্রেণির ছাত্র বুখারী আলম বলেন, কলেজের সড়ক, খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ সবখানেই হাঁটু সমান পানি। এতে কাপড়-বই খাতা নষ্টের ভয়ে শিক্ষার্থীরা কলেজে আসেনা। শিক্ষকরাও ক্লাস নেন না। সামনে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।
সাদিয়া আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছেলেরা কাপড় উচু করে আসলেও মেয়েরা পাড়ছেনা। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষক - শিক্ষার্থী সকলেরই ভোগান্তি হচ্ছে। যথাযত কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা তার।
শিক্ষকরা জানায়, কলেজটিতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ও ৮৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তিন-চার বছর আগে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের শিপলু তেল পাম্প ও কালি মন্দির এলাকার ছোট সেতু দিয়ে কলেজের পানি বিলে চলে যেত। তখন জলাবদ্ধতা হতোনা। কিন্তু কিছু ভূমিদস্যুরা পানি প্রবাহের খাল বিল দখল করে নিয়েছে। এখন একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। বর্তমানে কলেজের প্রবেশপথ, খেলারমাঠ, নামাজ ঘর ও কয়েকটি শ্রেণি কক্ষে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে সকল কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভাকে জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা। জলাবদ্ধতা থেকে কলেজ কে রক্ষা করতে গত মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের কুমারখালী কলেজ মোড় এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তবুও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তি হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যাক্রম বলে জানিয়েছেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান মধু ও প্রভাষক আব্দুল মজিদ। তাঁরা বলেন, তিন-চার বছর আগেও দুইটি সেতু দিয়ে পানি বের হয়ে যেত। কিন্তু সেগুলো ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। কলেজের চারিদিকে থৈথৈ পানি।
কুমারখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোল্লা মো. রুহুল আমীন বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভাকে লিখিত জানিয়েও সুফল পাওয়া যায়নি। জলাবদ্ধতা থেকে কলেজ কে রক্ষা করতে মঙ্গলবার মানববন্ধনও করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তা নিরসনের চেষ্টা চলছে।