শহিদ জয়, যশোর: যশোরের বহুল সমালোচিত সাবেক টাউন ইন্সপেক্টর (টিএসআই) রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সহায়তার অভিযোগে আজ বিকেলে দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৯ হাজার ৩৫২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ‘যশোরের বহুল আলোচিত টিএসআই রফিকুল ইসলাম ১৯৮৭ সালে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ মে পর্যন্ত তিনি যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। এসময়কালে তিনি প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে আয় করেন। যা দিয়ে নিজের ও স্ত্রীর নামে যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সময় অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক টিএসআই রফিক ও তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়। তাদের সম্পদের বিবরণী পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৯ হাজার ৩৫২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রমাণ পায়। যার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল মৌজাতে ১৮৩ দশমিক ০৪ শতক। একই উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা মৌজাতে ৬৭ শতক। সর্বমোট ২৪৯ দশমিক ০৪ শতক। যার মূ্ল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯২৫ টাকা। রফিকের স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিনের গোপালগঞ্জ পৌরসভার খাটরা মৌজাতে ৭ শতকের মধ্যে ২ দশমিক ৩৩ শতক। বাকী অবশিষ্ট তার শালিকার নামে ক্রয় করা। জমির মূল্য ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৬ টাকা। স্থাপনার মূল্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৬৬ টাকা। যশোর পৌরসভার বারান্দি মৌজায় ৬ দশমিক ৬৭ শতক জমি। যার মূল্য ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯১ হাজার ৬১ হাজার ৬৯৭ টাকা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সেনপাড়া পার্বত্য মৌজাতে ৮ দশমিক ২৪ কাঠার০০৯০ দশমিক ৬ অযুতাংশ। জমির মূল্য ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৭১ টাকা। ফ্লাট নির্মাণ ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা জেলার বিলামালিয়া মৌজাতে ৬ দশমিক ৫০ শতক। যার মূল্য ৮৮ হাজার টাকা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন মুজগুন্নি আবাসিক মৌজাতে ০ দশমিক ০৬৬১ একর। যার মূল্য ১০ হাজার টাকা। খুলনা ফুলতলরে ৯ নাম্বার মশিয়ালিতে ৭ শতক। যার মূল্য ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন হড়গ্রাম মৌজাতে ০ দশমিক ০০৩০৮ একর ১০ লাখ টাকা। যশোর পাগলাহ মৌজাতে ১৯১ শতক জমির মূল্য ১১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। খুলনার ফুলতলা মশিয়ালি মৌজাতে এক একর ১/২ ৫০ শতক স্ত্রীর নামে। বাকী অংশ শালিকার নামে ক্রয় করা। যার মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, অবশিষ্ট মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। যশোর কোতয়ালীর পাগলাদাহ মৌজাতে ৮৫ শতক। যার জমির মূল্য ৪০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৮৯ লাখ ১৫ হাজার ২২৩ টাকা। যশোর পৌরসভার বারান্দীপাড়া মৌজাতে ১ দশমিক ০৩৮ শতক জমির মূল্য ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯২ লাখ ০৩ হাজার ৬৪৭ টাকা। একই স্থানে ৬ দশমিক ৫০ শতকের বাড়ির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকাসহ মোট ৪২৯ দশমিক ৫৪৪ শতক জমি। এরপর দুদক সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের আবেদনে আদালত গত ২১ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধনী ২০১৯)-এর বিধি ১৮ মোতাবেক রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিনের অবৈধ সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে মঙ্গলবার এ মামলা দুটি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।