গত কয়েক দিন ধরেই কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। যেকোনো মূল্যেই কোটা সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ছাত্রদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন খ্যাতিমান নাট্যাভিনেতা তৌফিকুল ইমন। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাইকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারজীবন’ কবিতার একটি লাইন মনে করিয়ে দেন— ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই?’
বুধবার (১৭ জুলাই) মধ্যরাতে তৌফিকুল ইমন তার ফেসবুক আইডি থেকে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের সামনে সংস্কৃতিকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। তার ফেসবুর পোস্টটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘থিয়েটার, আবৃত্তি, নাচ, গান, চিত্রশিল্প, মূকাভিনয়, এবং সংস্কৃতির সব শাখার বন্ধুদের জন্য হাঁক ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই?’
আগামী শুক্রবার ১৯ জুলাই সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের সামনে বুক টানটান করে দাঁড়াবো আমরা। সাইদের মত। আমরা মানে, আপনি, আমি এবং সকলে। সংস্কৃতিকর্মীদের আসবার আহ্বান জানাচ্ছি। কালো টি-শার্ট পরে চলে আসুন। পারলে লিখে আনুন ‘আমিই সাইদ’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। চলুন হাত ধরি এবং শিক্ষার্থীদের জানাই যে আমরা সবাই মরে যাইনি। আমাদের নিজেদের অবস্থানও পরিস্কার করি। শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি। সময় মানুষকে মনে রাখে। সময়ের ডাক শুনতে হয়। না হলে নিজেকে ক্ষমা করা যাবে না।’
অবস্থান কর্মসূচি ইমন বলেন, প্রতিবাদ মিছিলে এভাবে গুলি করে মানুষ মারা যায় না। এটা ঘোরতর অন্যায়। সবাই, চুপচাপ। কাউকে-না কাউকে তো কথা বলতেই হবে। আমরা সচেতন সংস্কৃতিকর্মীরা পাশাপাশি হাত ধরে দাঁড়াতে চাই। শিক্ষার্থীদের জানান দিতে চাই, আমরা আছি, মরে যাইনি।
অবস্থান কর্মসূচির ডাকে সুহৃদ-সতীর্থদের কী রকম সাড়া পাচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তরে গুণী এই শিল্পী বলেন, বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি সংস্কৃতিকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। তবে আমরা চাইও না সবাই এসে দাঁড়াক। এতদিন ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া তোষামোদকারীরা বোল পাল্টে আমাদের সঙ্গে হাত মেলাক, সেটা আমরা চাইও না।
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেশ সহিংস রূপ নেয়। এ দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা যান। আহত হন কয়েকশ’ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলন এখনও চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।