১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের। লালবাগ কেল্লার মোড়ে যে ভবনটিতে ক্লাবটির যাত্রা হয়েছিল, তা গত এক সপ্তাহে ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায় শতবর্ষী ভবনটি ক্লাবটির সুখ-দুঃখে জড়িয়ে ছিল ছয় দশক। ক্লাবেরই এক উপদেষ্টার আবাসন প্রতিষ্ঠান সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করবে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ক্লাবটিতে উপদেষ্টার পদ নিয়েছেন তিনি।
ক্লাবটির পেছনের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার সঙ্গে মিলিয়ে সেখানে তৈরি হবে নয় তলা ভবন। আর সোয়া এক কাঠা জমির বিপরীতে ক্লাবটিকে নতুন ভবনে দেয়া হচ্ছে মাত্র এগারোশ বর্গফুট জায়গা। ভেঙে ফেলা ক্লাব ভবনটি ছিল আটশত চল্লিশ বর্গফুট জায়গায়। এই বিনিময় হার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন নাসিম বলেন, তারা তিন বছরের জন্য সময় নিয়েছে। তারা বলছে, দুই তলা পর্যন্ত ঢালাইয়ের পর আমাদেরকে ক্লাব বুঝিয়ে দেবে। ওদের সঙ্গে আমাদের একটি মামলা ছিল। এখন তারা যে প্রস্তাবটি দিয়েছে, তাতে আমরা বলেছি ঠিক আছে।
ভবনটি নির্মাণ করছে নাজ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি হাজী আব্দুল বারেকের মালিকানাধীন। তিনিই লালবাগ ক্লাবের উপদেষ্টা পদটি বাগিয়ে নেন সপ্তাহ আগে। জমির অনুপাতে ক্লাবকে ঠকানো হলো কি না এমন প্রশ্নে আব্দুল বারেক জানান, সবার মত নিয়েই হয়েছে সিদ্ধান্ত।
ক্লাবটির চেয়েও বেশি বয়সী ছিল পুরনো ভবনটি। যা হয়ে উঠেছিল পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের অংশ। এ নিয়ে লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুম্মন বলেন, শুরু থেকে ভবনটি ক্লাবেরই ছিল। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাই পুরনো ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান রিপন বললেন, এখন আমাদের ফুটবলের অবস্থা ভালো না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না।
এভাবে একের পর এক ঐতিহাসিক ভবন গুড়িয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ ঐতিহ্য রক্ষা আন্দোলন কর্মীরা। আরবান স্টাডি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তাইমুর ইসলাম বলেন, পুরো পক্রিয়ার মাধ্যমে ডেভলাপরকে বরং উৎসাহিত করা হচ্ছে। একটার পর একটা বিল্ডিং ভেঙে যাচ্ছে। সরকারের উপদেষ্টা যিনি আছেন, উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। উনার থেকে বলিষ্ঠ কণ্ঠে শুনতে চাই, আমরা ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে চাই। ঢাকা একটা ঐতিহাসিক নগরী।
গত কয়েক বছরে বড় কাটরা, নিলাম ঘর, জাহাজ বাড়িসহ বেশ কয়েকটি পুরাকীর্তি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রত্নতত্ব অধিদফতর, রাজউক বা সিটি করপোরেশন।