সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো দেশ। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীরা। এতদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়ে এলেও গত দুইদিন ধরে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার বিভিন্ন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গেল কয়েকদিন ধরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনাও। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
বাংলাদেশের এই আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে জানিয়ে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ঢাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভে শত শত আহতের রিপোর্ট সম্পর্কে আমরা সচেতন আছি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই। যারা এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সরকার। কিন্তু সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল’ অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেওয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে সরকারি চাকরিতে `বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে’ এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিক্রিয়ায় পর থেকেই ফেসবুকে ছড়াতে থাকে, ‘আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি-নাতনি’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়ে রাতভর বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরদিন সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।