নাশকতার মামলায় গ্রেফতার রাজশাহীর মসজিদ মিশন অ্যাকাডেমির (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা নুরুজ্জামান খানকে (৫৫) ছাড়াতে তদবির করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আওয়ামী লীগের দুজন নেতা।
অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান খান ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ছিলেন। পরে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। এখন তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
নুরুজ্জামান খানকে ছাড়াতে তদবির করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদরের সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এবং রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর হড়গ্রাম মুন্সিপাড়া মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে নুরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে কাশিয়াডাঙ্গা থানা-পুলিশ। এরপর বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৭ নভেম্বর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি নাশকতার মামলায় নুরুজ্জামানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, জামায়াত নেতা নুরুজ্জামান খানকে ছাড়াতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারকে ফজলে হোসেন বাদশা বেশ কয়েকবার ফোন করেন। সেইসঙ্গে পুলিশ কমিশনারের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর সাক্ষাতের সিডিউলও নিশ্চিত করেন বাদশা। আওয়ামী লীগ নেতা বাবু এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত এই আসামিকে ছাড়েনি। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ১৯৮২ সালে জামায়াতে ইসলামী মসজিদ মিশন একাডেমির (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) নামের এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা আছে। এদের মধ্যে দুজন স্বরাষ্ট্র মণন্ত্রালয়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। মাঝে মাঝেই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গ্রেফতার হন।
মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলী মিয়া এজাহারে উল্লেখ করেন, আগের দিন ১৬ নভেম্বর বিএনপি ও জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচি ছিল। এ জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর সায়েরগাছা এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নিয়ে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিলেন। খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে এসআই শাহ আলী মিয়া সেখানে যান। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় ফায়ার সার্ভিস অফিস লক্ষ্য করে দুটি ককটেল ছুঁড়ে মারে। একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে অফিসের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। অপর একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে এই মামলায় অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান খানকে গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়ানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতা মসজিদ মিশন অ্যাকাডেমির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু। নুরুজ্জামানকে ছাড়াতে তিনি রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশার কাছে ছুটে যান। এরপর বাদশা আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারকে বেশ কয়েকবার ফোন করেন। বুধবার বেলা ৩টায় পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি বাবুকে সময়ও নিয়ে দেন। বাদশা গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা ছিল না। একটা পুরোনো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ জন্য আমি বাদশা ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম। বাদশা ভাই পুলিশ কমিশনারকে ফোন করে দেখা করার জন্য আমাকে সময় নিয়ে দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ আগে জামায়াতের রাজনীতি করলেও এখন তিনি সংগঠনটির বিরোধিতা করেন। আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এছাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। একারণে অধ্যক্ষকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছিলাম।’
কাশিয়াডাঙ্গা থানা থেকে নুরুজ্জামানকে আদালতে পাঠানোর সময় পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রাথমিক তদন্তে এই আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘নুরুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তদন্ত চলছে। মামলায় থাকা অভিযোগ এখন বিচারাধীন বিষয়।’