ঢাকা
১৯শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:৩০
logo
প্রকাশিত : জুলাই ২৮, ২০২৪

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় কেমন প্রভাব পড়বে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এ আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে তা মনে হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে এখন যেসব ‘প্রমাণ’ আছে, তা দিয়ে তারা খুব সহজেই নীতিনির্ধারকদের ওপর বিভিন্ন রকম চাপ প্রয়োগ করতে পারবে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করে। একইভাবে ঢাকায় ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। সব সহিংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে হওয়া উচিত। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, যা হবে সংলাপের উপযোগী।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সব মানুষকে মুক্তভাবে যোগাযোগের জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে পূর্ণ ইন্টারনেট সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও মান নিশ্চিত করতে বলা হয়।

ওই দিনই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ছয় দিনের যোগাযোগ বিধিনিষেধের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ ‘বেআইনিভাবে বল প্রয়োগ অব্যাহত’ রেখেছে।

সামাজিকমাধ্যমে পাওয়া তিনটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী ও মৃদু প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।

জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টির বিবৃতি দেওয়ার আগেই বিবৃতি দেয় নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

প্রভাব কী হতে পারে?
বাংলাদেশ ইস্যুতে চীন ও ভারতের অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নয়। বাংলাদেশে চলমান এই অস্থিরতাকে ঘিরে চীন ও ভারত ‘অভিন্ন’ সুরে কথা বলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাদের এই অভিন্ন অবস্থান ‘খুব বিস্ময়কর’ নয়।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে যেসব তথ্যাদি আছে, সেগুলো দিয়ে তারা চাপ সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশ সরকার তা আমলে নেবেন না বলে তার ধারণা। আন্তর্জাতিকভাবে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থনকে তারা যথেষ্ট বলে মনে করে। সে কারণেই তাদের পক্ষে এ ধরনের একটা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় টিকের থাকার কথা বিবেচনা করা সম্ভব।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, পশ্চিমের সঙ্গে তার (শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ) দূরত্বের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় রকমের উপাদান হিসেবে কাজ করবে। তারা কোনো ধরনের অবস্থান নেবে, তা আমরা দেখব। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ তৈরি হবে। আজকে বা এই সপ্তাহের মাঝেই হবে, তা বলছি না। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব বলে আমার ধারণা।

যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন যে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে চলমান এই আন্দোলন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চললেও সেটি নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের উচিত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জোর দেওয়া।

তিনি বলেন, সরকার বলছে— শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মাঝে জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল। কোটা আন্দোলনের মাঝে তারা ঢুকেছে, সেটি যদি সরকার প্রমাণ করে দেখাতে পারে, তাহলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে এই সমালোচনা থাকবে না। বাংলাদেশের ভেতরের মানুষও বুঝতে পারবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীরও মনে করেন, বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ বাড়তে থাকলে চাপ হবে।

গত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও পশ্চিমারা এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করেনি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটকে ‘ভিন্ন’ হিসেবে বর্ণনা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, শুরুতে এটি ছিল ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলন। পরে এটিকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকে গেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি শুরুতেই মোকাবিলা করতে পারত সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সামিয়া জামান বিবিসিকে বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো যে বল প্রয়োগ করেছে, তার দরকার ছিল না। সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এ অবস্থা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এর পেছনে সরকারের দায় আছে। তারা তা এড়াতে পারে না। রায় ঘোষণা আরও আগে করা যেত। রায়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করায় অন্যান্য গোষ্ঠী এখানে আসার সুযোগ পেয়েছে।

তবে চীন-ভারতের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানের ফারাক সম্পর্কে তার বক্তব্য হচ্ছে, আমরা দুটা ভাগে নিজেদের ভাগ করে ফেলেছি। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে এসেছি। এ ইস্যুতে আশপাশের দেশগুলো যে অবস্থান নিচ্ছে, সেখানে তাদের স্বার্থ জড়িত।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram