ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। শনিবার রাত ১টার দিকে তাকে উত্তরার বাসা থেকে ডিবি আটক করে নিয়ে যায় বলে একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আসিফ মাহতাবের ছোট বোন নাফিসা। এদিকে ছেলে জীবিত আছে কিনা জানতে তার বাবা-মা রোববার মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে যান তারা।
বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এদিকে মিন্টো রোডে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আসিফ মাহতাবের বাবা শাহাবুর রহমান বলেন, কী কারণে ছেলেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে আসা হলো তা আমরা জানি না। আমরা ছেলের খোঁজ নিতে মিন্টো রোডে এসেছি। কিন্তু এখানে কেউ কথা বলছে না। ভেতর থেকে জানানো হচ্ছে আমরা আনলে তো ফোন করে জানাতাম। এই অবস্থায় আমরা শঙ্কায় আছি। আমরা আসলে আসিফ মাহতাবের খোঁজ চাই। আসলে সে কি আছে? থাকলে কেমন আছে? জীবিত আছে? এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বাবা শাহাবুর রহমান বলেন, আমার ছেলে কয়েকদিন আগেও বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। সে শুধু সাধারণ মানুষের কথা বলে, সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের কথা বলে। আসিফ সবসময় বলতো পুলিশের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।
ছেলেকে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে ফেসবুকে লেখালেখি করত। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তো অনেক ঘটনা ঘটেছে, সেটা তো আপনারা জানেন। এরপর সে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে না।
আটক কেন করা হলো— জানত চাইলে তিনি বলেন, রাত ১টার দিকে হঠাৎ করে বাসায় নক করেছে। আমার ছেলেই দরজা খুলে দিয়েছে। বাসায় ঢুকে ছেলেকে বলে আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে। বলা হয়, কেউ নড়াচড়া করবেন না। সবার গায়েই পুলিশের পোশাক ছিল। কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলা হয়, ওকে (আসিফ) জিজ্ঞেস করেন। কোনো কারণ বলেনি। আনার পর কোনো সন্ধানও দিচ্ছে না। তুলে নিয়ে আসার পর ডিবি অফিস থেকে আমাদের কোনো কিছুই জানানো হয়নি।
মা সালমা জাহান বলেন, ভয়ে আছি। দেশের পরিস্থিতিতে বুঝতেছি অনেককেই তুলে আনা হচ্ছে। কিন্তু আমার ছেলে তো রাজনীতি করে না। তাকে তুলে আনার সুনির্দিষ্ট কারণ তো আমাদের জানাতে হবে। সেটা জানানো হয়নি। এখন ডিবি অফিস থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ছেলেকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি।
আসিফের ছোট বোন নাফিসা বলেন, রাত ১টার দিকে ডিবি পরিচয় দিয়ে কয়েকজন সদস্য বাসায় এসে আমার ভাই আসিফ মাহতাবকে নিয়ে যায়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিবির সদস্যরা।
আটকের চার ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন আসিফ মাহতাব। তাতে তিনি লিখেন- আপনারা জানেন অনেক মানুষকে কোনো ভ্যালিড কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা হচ্ছে। আপনারা এটাও জানেন আমি আপনাদের পাশে ১০০% ছিলাম, এখনো আছি। এই অপরাধের কারণে আমাকে যদি গ্রেফতার করা হয় কিংবা গুম করা হয় তাহলে আপনারা কি করবেন?
তিনি আরও লিখেন, না আমি ভয় পাচ্ছি না। যারা নিরাশ্রয় মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে পারে, ওই কাপুরুষদেরকে ভয় পাব কেন? আমি মৃত্যুর জন্য সবসময় প্রস্তুত। সবারই মরতে হবে, এইটাই সত্য। কিন্তু আমি জনগণের মাইন্ডসেট বুঝতে চাই। এই উম্মাহ কি এক? নাকি এই উম্মাহ স্বার্থপর, বিভক্ত?
পাঠ্যবইয়ের শরীফ থেকে শরীফা গল্পের পাতা ছিঁড়ে আলোচিত-সমালোচিত হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব।
আলোচিত এ শিক্ষক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনেও মাঠে ছিলেন।