উত্তর কোরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে চীনা সীমান্তের কাছে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সামরিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ইতোমধ্যে এই দুর্যোগ সামাল দিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট কিম জং উন উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে মাঠে নেমেছেন। প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কিম জং উন একটি বিমানবন্দরের মাঠে কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর তিনি গাড়িতে করে বন্যার অবস্থা দেখতে রাস্তায় বের হন। বলা হয়েছে, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় ১০টি হেলিকপ্টার ও সরকারি নৌযান ব্যবহার করা হচ্ছে। কেসিএনএ জানিয়েছে, রবিবার চীন ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত বরাবর নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এতেই সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বন্যায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
উত্তর কোরিয়ায় নজিরবিহীন বৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে দেশটির কায়েসং সিটিতে একদিনে রেকর্ড ৪৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ফলে সপ্তাহান্তে উত্তর কোরিয়ায় বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে।
দেশটির রোডং সিনমুন পত্রিকা বলেছে , চীনের সীমান্তবর্তী সিনুইজু শহর এবং উইজু কাউন্টিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বহু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। কৃষিজমি ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছে যে অনেককে পরে এয়ারলিফটের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে, যদিও বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এই সংবাদমাধ্যম। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য ঘাটতি এবং দুর্বল অবকাঠামোর মতো বিদ্যমান সমস্যাগুলিকে জটিল করে তুলতে পারে। বন্যায় কতজন মারা গেছে সেসম্পর্কে কিছু জানায়নি রোদং সিনমুন।
এদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা এস. রাজারত্ম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গর্ডন ক্যাং বলেছেন, বন্যা উত্তর কোরিয়ায় কোনো বিরল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, তবে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে কিম জং উন সরেজমিনে গিয়েছেন এই ব্যাপারটি বেশ বিরল। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা সাধারণত প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের জন্যেই সংবাদের শিরোনাম হন। এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যু বা কারণে তাকে সংবাদ শিরোনামে তেমন দেখা যায় না।
গর্ডন ক্যাং বলেন,“আমার ধারণা, বন্যার পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন এমন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে কিম জং উন আসলে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চাইছেন যে, বন্যার্ত মানুষকে সহায়তা প্রদানের মতো সক্ষমতা তার রাষ্ট্র রাখে।”
প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। যদিও বাইরের জগতে দেশের প্রায় কোনো তথ্যই প্রকাশ করে না কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন সরকার, তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ২০১৫ সালে প্রকাশিত নথি সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জনগণের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৭০০ ডলার।