ঢাকা
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৪০
logo
প্রকাশিত : জুলাই ৩০, ২০২৪

প্রতিবাদ বিক্ষোভ : ঝুঁকি বাড়ছে প্রবাসীদেরও

কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় হতাহতের খবরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে। হতাহতের বিভিন্ন সংখ্যা ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে অনলাইনের পাশাপাশি মাঠেও সরব তাঁরা।

প্রবাসে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মিছিল, সরকারবিরোধী প্রচারণায় একদিকে সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আইন লঙ্ঘন করে শাস্তির বড় ঝুঁকিতে পড়ছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভের দায়ে গত সপ্তাহে ৫৭ বাংলাদেশির কারাদণ্ড হয়েছে।

বিক্ষোভ হয়েছে সৌদি আরবসহ পশ্চিমা বেশ কিছু দেশে। অনেক স্থানে প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ নিষিদ্ধ এমন দেশগুলোতে বাংলাদেশ মিশনগুলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের এসব কর্মসূচি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল সোমবার গ্রিস, মাল্টা ও আলবেনিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি বার্তা প্রকাশ করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিদেশে কতিপয় মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটি গ্রিস, মাল্টা ও আলবেনিয়ার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই তারা স্থানীয় আইন, বিধি-বিধান ও প্রচলিত রীতিনীতির প্রতি যেন শ্রদ্ধাশীল থাকেন, সে জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস অনুরোধ জানিয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে যাতে কারো ব্যক্তিগত ও বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ক্ষতি না হয় এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও প্রবাসীদের কষ্টার্জিত সুনাম যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য দূতাবাস থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রবাসে সরকারবিরোধী প্রচারণার পটভূমিতে গত ২৫ জুলাই পররাষ্ট্রসচিব বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনপ্রধানকে বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় মিশনপ্রধানদের কাছে সরকারবিরোধী প্রচারণাসহ সুনির্দিষ্টভাবে বেশ কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। সেগুলো হলো বাংলাদেশ মিশন বাংলাদেশ পরিস্থিতি স্বাগতিক দেশের সরকারকে অবহিত করতে পেরেছে কি না? ওই দেশের সরকারের বাংলাদেশ পরিস্থিতির বিষয়ে অবস্থান কী?

পররাষ্ট্রসচিব জানতে চেয়েছেন, বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে কি না? হয়ে থাকলে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার জন্য মিশন ওই গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না। মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের’ পক্ষে কোনো মিছিল, সমাবেশ বা জমায়েত হয়েছে কি না। মিশনের নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে পররাষ্ট্রসচিবের বার্তায়।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর বিষয়ে কূটনৈতিক মিশন ওই দেশে নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শিক্ষাবিদসহ জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন এমন ব্যক্তিদের অবহিত করেছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার/এক্স, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপায় আছে কি না, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। গতকাল ছিল প্রশ্নগুলোর উত্তর পাঠানোর শেষ দিন।

উপসাগরীয় দেশগুলোতে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন তথ্য ও অপতথ্য এবং গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বাংলাদেশি স্থানীয় আইন ভেঙে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। যাঁদের সাজা হচ্ছে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

কানাডাপ্রবাসী এক বাংলাদেশি জানান, সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে অংশ নেন। সাধারণত প্রবাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনগুলো তাঁদের জন্য বড় সুযোগ। কারণ এগুলো দেখিয়ে তাঁরা দাবি করার সুযোগ পান যে তাঁরা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। আর দেশে ফিরলে তাঁদের নিপীড়ন বা হয়রানিমূলক শাস্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে।

পশ্চিমা একটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, নিহতের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অনেকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব কিছু প্রবাসী বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশ সরকারবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তাঁদের কয়েকজনের নামে বাংলাদেশে মামলাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ আগে থেকেই প্রবাসী ও বিদেশে আশ্রিত বাংলাদেশিদের একটি গোষ্ঠী সক্রিয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নির্বাচনের ধরন নিয়েও অনেকে অসন্তুষ্ট। তাঁদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশে সংঘাত-সহিংসতা, হতাহতের ঘটনায় বিশ্বের কাছে ভালো বার্তা যায়নি। পশ্চিমা কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। এখন অনেক যোগাযোগ ইন্টারনেটভিত্তিক। ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় বাংলাদেশের ভেতরে যেমন যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি বা বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের পরিবারের ওপর পড়েছে। বাংলাদেশে কী ঘটছে তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram