কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ না নিয়েও হামলার শিকার রাইসুল রহমান রাতুল (১৮) নামে এক কলেজছাত্র। দশ দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। পরিবারের অভিযোগ, রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের সড়কে রাতুলকে ডেকে নিয়ে পেটে রাবার বুলেট (ছরাগুলি) ছোড়া হয়। এতে ওই তরুণের নাড়িভুঁড়ি বাইরে বের হয়ে আসে। ১৯ জুলাই শুক্রবারের এ ঘটনায় গুরুতর আহত রাতুলকে উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার পরিবারের সদস্যরা জানান, আজমপুরে জুমার নামাজ পড়ে টঙ্গী বোনের বাড়ি যেতে বের হন রাইসুল রহমান রাতুল। যাওয়ার পথে আজমপুর কাঁচাবাজারের পাশে এক পুলিশ সদস্য তাকে ‘এই এদিকে আসো…শুনো’ বলে ডেকে নেন। এরপর পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাবার বুলেট ছুড়তে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন রাতুল। পরে তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাড়ে ৫ ঘণ্টার অপারেশনের পর চিকিৎসাধীন তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। ক্রমাগত বিদ্ধ হওয়া বুলেটে কিডনিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাসপাতালে গিয়ে দরজার কড়া নাড়তেই রাতুলের বোন সামিরা রহমান তরিন আসেন। প্রথমে তিনি ভয়ে এড়িয়ে গেলেও পরে কথা বলতে রাজি হন। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে তার মা দিয়া রহমান হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তার এমন বুকফাটা কান্নায় নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না রাতুলের বাবা শহিদুর রহমানও। মা দিয়া রহমান ঘুমন্ত রাতুলকে দেখিয়ে বলছিলেন, ও ছোট একটা বাচ্চা, ও কী দোষটা করল বলেন তো। ও এখন কীভাবে সুস্থ হবে। সুস্থ স্বাভাবিক হতে পারবে তো!
বোন সামিরা বলেন, তাকে এভাবে কেন গুলি করা হলো। সে তো কোনো অপরাধ করেনি। ওইদিন আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম। সে আমার কাছে যাওয়ার জন্য নামাজ শেষ করে রওয়ানা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার অপারেশন শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে হাসপাতালের প্রশাসনের লোকজন আমাদের ফোন করে ঘটনা জানায়। এরপর আমরা দৌড়ে চলে আসি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে (রাতুল) ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমার বাবা সাধারণ ব্যবসায়ী। এখন রাতুলের চিকিৎসায় প্রতিদিনের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন আহত রাইসুল রহমান রাতুল। তিনি উত্তরার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বাবা শহিদুর রহমান ব্যবসায়ী। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
হাসপাতালের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, সেদিন অসংখ্য গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী এসেছিলেন। আশঙ্কাজনকদের মধ্যে রাতুলের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। দীর্ঘ সময় নিয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে তার অপারেশন শেষ করতে হয়েছে।