শ্রাবণের শেষপক্ষে এসে দেশ জুড়ে অঝোর ধারায় ঝরছে বারিধারা। মৌসুমি বায়ুর চাপ আধিক্যে সমুদ্রে সঞ্চালনশীল সজল মেঘমালা বিস্তৃতি ঘটেছে। এ বৃষ্টিপাত থেমে থেমে আরো এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ শনিবার সকাল হতে আগামীকাল রবিবার অবধি বৃষ্টিপাতের দাপট ক্ষাণিকটা কম থাকলেও আবার বাড়বে সোমবার থেকে। তুমুল বৃষ্টির দাপট অধিকার করে নিতে পারে।
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার দিনভর টানা বৃষ্টি ছিল। গতকালও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। সারা দেশে বেড়েছে বৃষ্টিপাত। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। উপকূল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে সঞ্চারণশীল মেঘ ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ নদীবন্দরকে ২ নম্বর স্থানীয় নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ফেনীতে ২৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। যা গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৬ মিলিমিটার। এছাড়া ভোলায় ২০৬ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ১৫৭, বরিশালে ১৫২, খুলনার কয়রায় ১১১, মোংলায় ১৬০, চুয়াাডাঙ্গায় ১০৯, চাঁদপুরে ১৪৯, রামগতিতে ২২২, বান্দরবানে ১১৯, ঈশ্বরদীতে ১০৫ মিলিমিটারসহ প্রায় সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টির খবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বৃষ্টিপাত আরো ১০ দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মাদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আজ শনিবার সকাল থেকে রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টির আধিক্য কম থাকলেও আবারও বাড়বে। জলীয়বাষ্প ও মৌসুমি লঘুচাপের অশঙ্কা থাকলেও নিম্নচাপ নাও হতে পারে। তবে উত্তর পূর্বাঞ্চলে জলাবদ্ধতা হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাস জুড়ে মৌসুমি বায়ুর দাপট থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত আজ শনিবার থেকে কিছুটা কমতে পারে। তবে, আগামী সাত-আট দিন বৃষ্টি চলতে পারে। থেমে থেমে এই বৃষ্টি এই মাসের বেশির ভাগ সময় ধরে চলতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, রবিবার থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে পারে। এরপর ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে যাবে। তবে উপকূল জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, যা টানা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, চলতি মাসে তিন থেকে চার দিন বজ্রঝড় হানা দিতে পারে। সেই সঙ্গে এই আগস্ট মাসে বঙ্গোপসাগরে এক-দুইটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া চলতি মাসে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুইটি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬-৩৮ ডিগ্রি) বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি আগস্ট মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক-দুইটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন-চার দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে। তবে চলতি মাসে দেশে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর মধ্যে আজ শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, এই সময়ে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। পরদিন আগামীকাল রবিবার একই সময় পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আগামী সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, এই সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমানের সই করা এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় পাহাড়ধসের সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে চট্টগ্রামে।