ঢাকা
২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৫২
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ৬, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ৬, ২০২৪

আবু সাঈদদের রক্তে ভিজে এলো যে বিজয়

'মাগো ভাবনা কেন/আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/ তোমার ভয় নেই মা/ আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। আমরা হারবো না/ তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়ব না/ আমরা পাঁজর দিয়ে দুর্গ ঘাটি গড়তে জানি/ তোমার ভয় নেই মা/ আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।' গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় ও সুরে গাওয়া দেশাত্মবোধক গানটি বাঙালিমাত্রেরই জানা। ১৯৬১ সালে প্রথম প্রচারিত হওয়া এই গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।

এবার বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জুড়েও লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল শাশ্বত এই গানটি। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি নিয়ে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল গত ৫ জুলাই।

নানা ঘটনা-অঘটন আর হত্যাযজ্ঞ ও রক্ত মাড়িয়ে সরকারের পদত্যাগের চূড়ান্ত এক দফার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের গড়া আন্দোলনটি হয়ে ওঠে গণঅভ্যুত্থান। আন্দোলনের অকুতোভয় সমন্বয়কদের দুর্বার সাহস আর দেশপ্রেমে ভর করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার মধ্য দিয়ে পূর্ণ সফলতা অর্জন করে অভূতপূর্ব এই আন্দোলন। হাজারো গুলি, হত্যা, হামলা- মামলা, গ্রেফতার, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট, ছররা গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডও পিছু হটাতে পারেনি অধিকার আদায়ের ন্যায্য দাবিতে অটল থাকা শিক্ষার্থীদের। জনতার কাছে তারা পেয়েছেন বীরের মর্যাদা।

সফল এই আন্দোলনে বড় ধরনের বাঁক বদল ঘটে ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায়। দুই হাত দুই দিকে টান টান প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে সাঈদ বলেছিল, 'গুলি আন্দোলনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। শিক্ষার্থীদের বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন আবু সাঈদ।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্তই যেন 'মাগো ভাবনা কেন' গানেরই কথা দিয়ে গাঁথা। বাঁচতে শুধু জানবো না/ আমরা চিরদিনই হাসি মুখে মরতে জানি/ তোমার ভয় নেই মা/ আমরা প্রতিবাদ করতে করো'। পুলিশ তার বুকে গুলি চালিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা করে। এই দৃশ্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে। যারাই এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখেছেন কেউই মানতে পারেননি, চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সাঈদের মৃত্যু যেই গানটিতে আরো রয়েছে- 'আমরা অপমান সইব না/ ভীরুর মত ঘরের কোণে রইব না/ আমরা আকাশ থেকে বজ্র হয়ে ঝড়তে জানি/ তোমার ভয় নেই মা/ আমরা প্রতিবাদ করতে জানি/আমরা পরাজয় মানব না/ দুর্বলতায় জানি/মাগো ভাবনা কেন।'

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু থেকেই ছিল অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কী রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?' তার এই মন্তব্যে মর্মাহত ও অপমানিত বোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ঐ দিনই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দেন, 'চাইতে আসলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার', 'তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার'।

পরদিন ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত'। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ছাত্রলীগ রক্তাক্ত করে তোলে। এরপর ক্যাম্পাসে নামানো হয় পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবিকে।

প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সেদিনই রংপুরে আবু সাঈদসহ ছয় জন হত্যার শিকার হন। এতে আরো ঘোলাটে হয় পরিস্থিতি। ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন রাজধানীর বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী নিহত হন। পরের তিন-চার দিন ধরে চলে সংঘর্ষ। এ সময়ে শিক্ষার্থীসহ নিহত হন প্রায় ৩০০ জন। এরপর কারফিউ জারি করা হয়। শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেন। এক দফা আদায়ে ঘোষণা করা হয় অসহযোগ আন্দোলনের। এই কর্মসূচি চলাকালেই রবিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষে শতাধিক লোক নিহত হন। এরমধ্যেই 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে একদিন এগিয়ে এনে মঙ্গলবারের পরিবর্তে গতকাল সোমবার পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর গতকালই পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা, বিজয়ের পতাকা ওড়ান ছাত্র-জনতা।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram