কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি পোশাক রপ্তানি খাত। গত ১৯ জুলাই থেকে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ দিন পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ ছিল। তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুসারে স্বাভাবিক অবস্থায় গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা উৎপাদন হয়। সেই হিসাবে দেশের চলমান সংকটে ১২ দিনে উৎপাদন বাবদ ক্ষতি হয়েছে ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া মজুরি প্রদান, সময়মতো জাহাজীকরণ করতে না পারায় অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্ট, এয়ার শিপমেন্ট দাবি করছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এফওবি ভিত্তিতে সমুদ্রপথে জাহাজভাড়া ক্রেতা বহন করে। সেখানে প্রতি কেজি পণ্য আকাশপথে রপ্তানি করতে তিন-চার ডলার খরচ হয়। তা বহন করতে হবে রপ্তানিকারকদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ব্যাপকভাবে কমে যাবে, বিদেশি ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নেবে। এরই মধ্যে অনেক ক্রেতা হারিয়েছেন তাঁরা। তাই রপ্তানি চেইন দ্রুত স্বাভাবিক করা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া জরুরি।
এ ছাড়া সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে যেসব কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য না করে ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের সুবিধা এবং নতুন ঋণ প্রধানের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা বলেন, কভিড মহামারির সময় সরকার যে কম সুদে ঋণ দিয়েছিলেন, সে ধরনের একটা সফট লোনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
এই বিষয়ে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক দিন উৎপাদন বন্ধ থাকলে গড়ে প্রতিদিন লোকসান হয় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কারখানার বন্ধের দিনগুলোতে প্রতিদিন মজুরি বাবদ লোকসান গুনতে হয় এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১২ দিনে শুধু মজুরি বাবদ লোকসানই ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আশা করি, এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকার আগের মতো নীতি সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবে।
বিজিএমইএর তথ্য মতে, ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা খুলেছে। নিরাপত্তা বিষয়ে গতকাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে পোশাক খাতের মালিকদের বেঠক হয়। সেই হিসাবে বিজিএমইএ নেতারা মনে করেন, আজ থেকে শতভাগ কারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যাবে।
পুনরায় কারখানা চালু করতে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা পাওয়ায় উদ্যোক্তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এ ছাড়া তিনি গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিতে সরকারের কাছে আহবান জানান।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনা এখনো স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। গত শনিবার পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৭৮৭ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার জমেছে বন্দরে। একদিকে আমদানি করা পণ্যের জট, অন্যদিকে রপ্তানিমুখী পণ্য জাহাজীকরণেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। সে কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি ডিপোতেও।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির হিসাবে, গত ৮ আগস্ট সকালে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৮৭। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ছয়-সাত হাজার কনটেইনার থাকে।
রপ্তানি আয়
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত মে মাসে দেশের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.০৬ শতাংশ কমে ৪.০৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুসারে, মে মাসের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫.৩৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৩.৭৫ শতাংশ কম।
এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হিস্যা কমেছে ১৫.৩২ শতাংশ। এ সময় বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে রপ্তানি আয় ছিল ৩৮.৪০ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর যা ছিল ৪৫.৩৫ বিলিয়ন ডলার।