ঢাকা
২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৯:০৮
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টিহারা চার শর বেশি মানুষ

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এর ৪৫২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী তিনজন। প্রত্যেকেরই চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গ পুলিশের ছররা গুলিতে আহত। কার চোখের দৃষ্টিশক্তির যে কী অবস্থা হবে সেই ভাবনাতেই দিন কাটছে তাদের।

৪৫২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধরা হলেন কুষ্টিয়ার আখতারুজ্জামান ও আব্দুর রফ (২১) ও ঢাকার চিটাগাং রোডের সাব্বির (১৭)। তিনজনের অবস্থাই কাছাকাছি। গত ৫ জুলাই দুপুরে কুষ্টিয়ার থানাপাড়া এলাকায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আখতারুজ্জামান।

গতকাল রবিবার দুপুরে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, গায়ে গামছা জড়িয়ে চোখে কালো চশমা পরে বিছানায় বসে আছেন। পাশে বসে থাকা তাঁর ভাই খাবার তুলে দিচ্ছেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, থানার সামনে গিয়ে স্লোগান দিতেই পুলিশ গুলি করে। তাঁর মাথা ও বুকে অনেক ছররা গুলি লেগেছে।

বেশ কিছু গুলি চোখেও লেগেছে। একই ওয়ার্ডে থাকা আব্দুর রফ ও সাব্বিরের একটি করে চোখে আঘাত লেগেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরের এক দফার আন্দোলনে দেশজুড়ে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে আখতারুজ্জামানদের মতো কত মানুষ যে চোখে আঘাত পেয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা জানা হয়তো অসম্ভব। শুধু রাজধানীর দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছে হাজারের বেশি মানুষ। হাসপাতাল সূত্র জানায়, চিকিৎসা নেওয়া এসব মানুষের মধ্যে ৩৯০ জন এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৭ জুলাই থেকে গত শনিবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৭৪০ জন। ভর্তি রোগী ছিল ৬১০ জন। অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ৪৯৫ জনের চোখে। এদের মধ্যে এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে ৩৬৬ জন এবং উভয় চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে ১৭ জন। এক চোখের দৃষ্টিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে ১৫১ জনের। উভয় চোখে সে সমস্যা হয়েছে সাতজনের। এক চোখে গুরুতর দৃষ্টিস্বল্পতা ৩৬ জনের এবং উভয় চোখের দৃষ্টিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে দুজনের।

অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ২৫০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৫২ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ২৪। উভয় চোখের দৃষ্টি হারানো রোগী চারজন। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তত আরো ৫০ জন রোগী দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সাদা ও কালো অংশ মিলিয়ে পুরো চোখকে বলা হয় আইবল। মণির ভেতরের ছোট অংশ যেখানে প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তা হচ্ছে পিউপিল। আর পিউপিল বাদে বাকি কালো অংশকে বলা হয় কর্নিয়া। এ ছাড়া আছে রেটিনা। চোখের এসব অংশ কোনটা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এখন ভর্তি থাকাদের কতজন চোখের দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত ৩৬৬ জনের একটি করে চোখের দৃষ্টি না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে এটা নিশ্চিত হতে পেরেছি। উভয় চোখের দৃষ্টি হারানোর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৭।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আল মাহমুদ লেমন বলেন, রাবার বুলেটে শত শত মানুষ তাদের দৃষ্টি হারিয়েছে। বেশির ভাগের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কারো কারো দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। একটা বড় অংশই বয়সে তরুণ কিংবা কিশোর। ১০ বছরের নিচেও কয়েকজনকে পেয়েছি চোখে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়।

আবাসিক চিকিৎসক ডা. আল মাহমুদ লেমন বলেন, আইবলে আঘাত পেলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বেশি থাকে। চোখের পাতায় আঘাত লাগলে সাধারণত দৃষ্টিশক্তি হারায় না। গুলি আইবলে বা অল্প গভীরে আটকে গেলে অস্ত্রোপচার করে বের করে অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে আশঙ্কামুক্ত করা যায়। তবে বেশি ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে বাঁচানো কঠিন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram