গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি-মুক্তি বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা চালাতে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে নবমবারের মতো ওই অঞ্চল সফরে আছেন ব্লিঙ্কেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সফরের কিছুদিন আগেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার বৈরিতা ও ব্যবধান দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ীভাবে দূর করার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুটা পরিবর্তিত নমনীয় এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। এর আগে গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় গাজাযুদ্ধ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হয়।
এরপর থেকেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছে। যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে হামাস।
হামাস জোর দিয়ে বলেছে যে, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে কিনা, সেটি নিয়ে এখনও চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতির যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটি একটি 'ভ্রম' বলে মন্তব্য করেছে হামাস।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সোমবার ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলের ওপর আবারও চাপ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেদিক থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই হয়ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কার্যকর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
যদিও ইসরায়েল ও হামাস কোনো পক্ষই তেমন কিছুরই আভাস দেয়নি। উল্টো, যুদ্ধবিরতি না হওয়ার কারণ হিসেবে এখনও তারা একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে।
রবিবার বিষয়টি হামাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। এক্ষেত্রে নতুন নতুন শর্ত ও দাবি তুলে ধরার মাধ্যমে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কাজেই যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী যেসব পক্ষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেটি নস্যাৎ করার জন্য জন্য ইসরায়েলই সম্পূর্ণরূপে দায়ী বলে মন্তব্য করেছে হামাস। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, আমরা আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি বলেছিলেন।
যদিও গত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নানান আলোচনা শোনা গেছে। বেশ কয়েকবার এ নিয়ে আশার আলো দেখা গেছে বলা হলেও পরবর্তীতে তেমন কিছুই ঘটতে দেখা যায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রবিবার নিজ দেশের মন্ত্রিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, হামাসের হাতে জিম্মি নাগরিকদের মুক্ত করার জন্য আলোচনা চলছে। তবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা কোনো ছাড় দিবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘এমন কিছু বিষয় আছে, যেসব ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং আমরা নমনীয় হতে পারি না।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা ওইসব বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে যাবো। আমরা খুব ভালভাবেই জানি যে, কীভাবে দুটির মধ্যে পার্থক্য করতে হয়।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। একমাস যুদ্ধের পর গত নভেম্বরে এক সপ্তাহের জন্য একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল দুইপক্ষ। তখন জিম্মিদের মধ্যে একশ পাঁচ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। এর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত দিয়েছিল ইসরায়েল। তখন ইসরায়েল জানিয়েছিল যে, তাদের শতাধিক নাগরিক এখনও হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। ওইসব জিন্মিদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন ইতোমধ্যেই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত মে মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাটি তুলে ধরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেখানে বলা হয় তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। প্রথম ধাপে শুরু হবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে। ওই সময়ে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। দেওয়া হবে মানবিক সহায়তা। একই সঙ্গে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যে বন্দী এবং জিম্মি বিনিময় হবে বলেও পরিকল্পনায় বলা হয়। কিন্তু ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।