ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৬:০৪
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ২০, ২০২৪

কার্নিশে ঝুলে থাকা গুলিবিদ্ধ সেই তরুণের বেঁচে ফেরার গল্প

হোটেলকর্মী আমির হোসেন। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে বিছানায় পড়ে আছেন। গত ১৯শে জুলাই তিনি জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। সেসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে যান তিনি। দৌড়ে রামপুরা এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলায় আশ্রয় নেন। রড ধরে ঝুলে থাকা অবস্থায় পুলিশ গুলি করে তাকে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারতলা থেকে লাফিয়ে তিনতলায় পড়ে যান। আমিরের দুই পায়ে ছয়টি গুলি করে পুলিশ। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে সেখানে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। এক শিক্ষার্থী আমিরের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।

পরে সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। আমির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার দুলারামপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার সন্তান। তার বাবা পেশায় অটোরিকশা চালক। চার ভাইবোনের মধ্যে আমির তৃতীয়। কিডনি জটিলতায় পাঁচ বছর আগে মা ইয়াসমিন মারা যান। মাকে হারিয়ে তিন ভাইবোন আসেন ঢাকায়। আমির রাজধানীর রামপুরা থানার মেরাদিয়া এলাকায় বড় ভাই নয়নের সঙ্গে বসবাস করেন।

আমির বলেন, ১৯শে জুলাই জুমার নামাজের পর বাসায় ফেরার সময় মেরাদিয়া মেইন রাস্তায় মাত্র এসেছি। তখন দুই পাশ দিয়ে বিজিবি’র গাড়ি ও পুলিশ আসছিল। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আমি ভয়ে আশ্রয় নিতে দৌড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলার ছাদে উঠি। আমার পেছনে পেছনে পুলিশও দৌড়ে আসে। পুলিশ আমাকে নিচে লাফ দেয়ার জন্য বারবার বলে। আমি লাফ না দিয়ে জানালার বাইরে রড ধরে ঝুলে ছিলাম। তখন তারা উপর থেকে আমার আশপাশে গুলি করে আবার লাফ দিতে বলে। বারবার গুলি করে আমাকে ভয় দেখায় আমি যেন নিচে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি। সেসময় একটা গুলি না লাগলেও আরেকজন পুলিশ দৌড়ে তিনতলায় নেমে গুলি করলে তখন আমার পায়ে ছয়টা গুলি লাগে।

এক একটা পায়ে তিনটা করে গুলি লাগে। কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত গুলির আঘাত রয়েছে। প্রতিটি গুলি এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, গুলি করার সময় আমার মাথা নিচু করে রাখি। গুলি করে পুলিশ চলে যাওয়ার পর আমি চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে তিনতলায় পড়ি। সেখানে পড়া অবস্থায় তিন ঘণ্টা যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম। গুলিবিদ্ধ জায়গা থেকে অনেক রক্তপাত হচ্ছিলো। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না, তিন ঘণ্টা পরে আমার চিৎকার শুনে এক শিক্ষার্থী কয়েকজনকে ডেকে আনে। তারা আমাকে পাশে থাকা ফেমাস স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাত বারোটায় আমাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। সেখান থেকে তিন দিন পরে আমাকে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে বাসায় আছি। ফরাজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন গুলিবিদ্ধ জায়গায় কিছুটা শুকালেও ডান পায়ে একদম শক্তি নেই। আমার ডান পা নড়ে না; অবশ হয়ে আছে। পুলিশ যে অ্যাকশনে দাঁড়িয়ে আমাকে গুলি করছিল তখন মনে হয়েছিল আমি আর বাঁচবো না। ওই ভবনের তিনতলায় ঝাঁপ দিয়ে যখন আমি ব্যথায় ছটফট করছিলাম তখনো মনে হয়েছিল আর মনে হয় দশ মিনিট বাঁচবো। ওই বিল্ডিংয়ের সঙ্গেই রামপুরা থানা। আমার এই অবস্থা যারা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

তিনি বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। আমার ছোট একটা বোন আছে। অনেক আগে মা মারা যায়। চিকিৎসক বলেছেন- তিন মাস বিশ্রামে থাকতে। পায়ে আগের মতো আর শক্তি ফিরে পাবো না। আমরা তিন ভাই ও এক বোন। সবার ছোট আমি। এক ভাই গ্রামে থাকে আরেক ভাই ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে মা মারা যান। বাবা আগে কৃষিকাজ করতেন সেখানে তাকে সাহায্য করতাম। অভাবের কারণে পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, ঘুমের মধ্যে এখনো লাফিয়ে উঠি। গুলির শব্দ আমার কানে বাজে। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার দুই-তিনদিন পর এক পরিচিত লোক আমাকে ভিডিওটি দেখায়। পুলিশ চাইছিল আমি যেন লাফ দিয়ে নিচে পড়ি।

রবিবার মেরাদিয়ার নয়াপাড়ায় আমিরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পাশে থাকা তার ফুফুর বাসার বিছানায় দুই পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে শুয়ে আছেন। চোখে-মুখে এখনো ভয়-আতঙ্ক ভর করছে তার। পাশে বসে সেবা করছেন ফুফু নাসিমা ও একমাত্র বোন হাসনা।

আমিরের ফুফু নাসিমা বেগম বলেন, একটি ভিডিওতে দেখেছি আমিরকে কি ভয়ানক ভাবে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ও বেঁচে ফিরেছে। সেদিন এই ঘটনা শুনে ফেমাস হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমিরের পায়ে অনেক গুলির ক্ষত। ওর মা মারা যাবার পরে বাবা আরেকটি বিয়ে করে। পরে তিন ভাইবোন ঢাকা চলে আসে। দুই ভাই কাজ করে। মোটামুটি খেয়ে-পরে ভালোই চলতো। ওর এখন যে অবস্থা তাতে দ্রুত কোনো কাজ করতে পারবে না। ডান পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছে না। ভিডিওতে দেখা গেছে ওকে যেভাবে গুলি করেছে তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ঘটনার দিন মেরাদিয়ায় অনেক ভয়াবহ অবস্থা ছিল। অনেক মানুষ মারা গেছে। আমিরকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার জন্য কোনো এম্বুলেন্স পাচ্ছিলাম না। পরে ফেমাস হাসপাতালের একটি এম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয়।

সৌজন্যে: মানবজমিন

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram