সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খানসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থার উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এই চিঠি পাঠিয়েছেন। এর আগে গত ১৫ আগস্ট এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাঁর ছেলে ছাড়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন—সাবেক মন্ত্রীর সাবেক পিএস অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।
অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ হিসেবে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে টাকা নিতেন। এ জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন। টাকা আদায়ের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন হারুন অর রশীদ।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম। পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্লা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়।
এর মাসখানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক দেন নজরুল। পরে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে দুই কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় আগের চেকটি ফেরত নিয়ে নজরুল তিন কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরে বাকি টাকা দেওয়া হয়। এসব টাকা আসাদুজ্জামান খানের ফার্মগেটের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হতো।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরার একটি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি নিতে গেলে অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা ফার্মগেটের বাসায় গিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ মতে, ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ জন পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।