ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে রোববার পাল্টাপাল্টি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি ঘিরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এমন একটি সময় হামলার এই ঘটনাটি ঘটলো, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আশাও প্রকাশ করা হয়েছিলো। খবর বিবিসি বাংলার।
কিন্তু রোববারের ঘটনার পর যুদ্ধবিরতির সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে কিনা, সেটি নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া ওই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহ সরাসরি যুদ্ধে জড়িতে পড়া দ্বারপ্রান্তে রয়েছে কী না, সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও গত সাতই অক্টোবরের পর দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ রোববার ভোরে দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটি দাবি করেছে যে, তাদের ওপর রকেট হামলা চালানোর জন্য হিজবুল্লাহ প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সে কারণে নিজেদের রক্ষার্থে আগাম সতর্কতা হিসেবে বিমান হামলা চালানো হয়।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ভাষ্যমতে, বিমান হামলা চালিয়ে তারা হিজবুল্লাহর বেশ কয়েক হাজার স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ৩২০টি রকেট বোমা নিক্ষেপ করে হেজবুল্লাহ। যদিও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় ইসরাইলের হামলার সত্যতা নাকচ করা হয়েছে।
উলটো দাবি করা হয়েছে যে, রোববারের রকেট হামলায় ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি ও গোলান মালভূমির চারটি স্থাপনায় তারা আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, তাদের নেতা ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর ইসরাইলে রকেট ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
তবে ইসরাইলের হামলার নিজেদের তিন যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরাইলের নৌবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া আকরে শহরে কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
পাল্টাপাল্টি হামলার পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত বলেই মনে হচ্ছে। তবে যে কোনো মুহূর্তেই যে অবস্থা পাল্টে যেতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে।
লেভান্ত ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলছেন, রোববারের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ তেমন পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন তিনি।
নাদের বলেন, হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তা ও ইসরাইলের নাগরিকদের সুরক্ষার কথা বলছে। এরমধ্যে দিয়ে এটাই বোঝা যায় যে, দেশটি আপাতত বড় আকারে সংঘাতে জড়ানোর দিকে হাঁটতে চাচ্ছে না।
এদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎসের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, ইসরায়েল পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ চায় না। তবে তারা পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানানো হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে শঙ্কা
গত সাতই অক্টোবরের পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদে দেশটির ওপর বেশ কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরাইলের পক্ষ থেকেও সেগুলোর পালটা জবাব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এবার এমন একটি সময় হামলার ঘটনাটি ঘটলো, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
তার ওই সফরের কিছুদিন আগেই ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার বৈরিতা ও ব্যবধান দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ীভাবে দূর করার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুটা পরিবর্তিত নমনীয় এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন।
তারও আগে কাতারের রাজধানী দোহায় গাজাযুদ্ধ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হয়। মূলত তারপর থেকেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছে।
যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে হামাস।
হামাস জোর দিয়ে বলেছে যে, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে কি-না, সেটি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতির যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটি একটি 'ভ্রম' বলে মন্তব্য করে হামাস।
তারপরও ইসরাইলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্লিঙ্কেন জানিয়েছিলেন, দ্রুতই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
গত সাতই অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন প্রতিরোধ করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওই হামলায় ইসরাইলের অন্তত ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং আড়াইশ জনকে জিম্মি করে হামাস। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।