ঢাকা
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:৫৭
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪

টাকার জন্য বেপরোয়া ছিলেন সাবেক এসপি মনিরুজ্জামান

সাতক্ষীরা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, স্বর্ণলুট, ভিন্নমত দমনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর তার বিরুদ্ধে ২০টি স্বর্ণবার লুটের লিখিত অভিযোগ জানানো হয় পুলিশ সদর দপ্তরে। কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মনিরুজ্জামানের সব অপকর্মকে অর্থের বিনিময়ে সায় দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের পুরো সময় অবৈধ অর্থের নেশায় বেপরোয়া ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। সাতক্ষীরা জেলায় থাকাকালীন পুলিশ সুপার কার্যালয় ও থানাগুলোকে তিনি অনাচারের দুর্গে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার পালা বদলের পর এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ থেকে বদলি করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গত বছর সাতক্ষীরা জেলার এসপি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০টি স্বর্ণবার লুটের অভিযোগ ওঠে। স্বর্ণবার লুটের পর উল্টো স্বর্ণ ব্যবসায়ী শেখ শফিউল্লাহ মনির বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা দেন তিনি। ওই সময় ভাঙচুর করা হয় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় গত বছরের ২ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। কিন্তু বিচার পাননি।

স্বর্ণ লুটের অভিযোগের বিষয়ে গত বছর কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শফিউল্লাহ স্বর্ণ চোরাকারবারি। তা ছাড়া জামায়াত-বিএনপির অর্থদাতা। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সংস্থার নাম করে স্বর্ণ নিয়ে এসে মিথ্যা কথা বলে গায়েব করে দেয়। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এসপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তখন বলেছিলেন, ব্যবসায়িক অংশীদার সঞ্জয় কুমার দাসের সঙ্গে যৌথভাবে দীর্ঘদিন ধরে সব নিয়ম-কানুন মেনে জুয়েলারিসহ একাধিক ব্যবসা করছেন তারা। তার অভিযোগ, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের নির্দেশে সাদা পোশাকধারী পুলিশ গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার ২০ পিস স্বর্ণের বার লুটের পর ব্যক্তিগত গাড়িচালক সাইফুলকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে সাতক্ষীরা বাইপাসের জামতলা এলাকায় ফেলে যায়।

মনিরুজ্জামানের সাবেক কর্মস্থল সাতক্ষীরা জেলায় তার ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে । ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেছে বেছে অর্থশালীদের আটক করতেন মনিরুজ্জামান। এরপর মিথ্যা মামলা আর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদায় করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা যেসব স্বর্ণের চালান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পাচার হতো সেগুলো লুট করতে কাজী মনিরুজ্জামান সাদা পোশাকধারী বিশেষ টিম গড়ে তোলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার হয়ে আসেন কাজী মনিরুজ্জামান। এর আগেও ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা সদর সার্কেল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। হয়েছেন খুলনা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারও। তবে পুলিশ সুপার হয়ে আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী মত দমনের নামে শুরু করেন অত্যাচার-নির্যাতন এবং অর্থ লুট।

নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ শাহীন বলেন, গত বছর ২৭ মে রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে সাদা পোশাকে একটি মাইক্রোবাসে তাকে তুলে নেন কয়েকজন। এরপর কয়েক দফা নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে ওই দলের একজন সদস্য বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি কথা বলার সাহস পায় না, সেখানে তুই মনিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে লাগতে যাস। স্যার বলছে তোর কলিজাটা ছিঁড়ে ওজন করতে।

মাসুম বিল্লাহ শাহীন জানান, হাইকোর্টে জামিন নিতে গেলে হাইকোর্ট এলাকা থেকে সাদা পোশাকে একটি মাইক্রোবাসে তাকে তুলে নেওয়া হয়। পরে অস্ত্রসহ আটক দেখায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে। চোখ বেঁধে তাকে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা আনা হয়। পথিমধ্যে বেশ কয়েকবার গাড়ি থেকে নামিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ভাইয়ের পক্ষ হয়ে এসপি মনিরুজ্জামান তার ওপর অত্যাচার এবং বাড়ি ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ করেন মাসুম বিল্লাহ।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মনিরুজ্জামানের নির্দেশে দিনভর অভিযান চালিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আটক করতেন তারা। এরপর রাত ১২টার পর তাদের হাজির করা হতো মনিরুজ্জামানের সামনে। সেখানে আটককৃতদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা আদায় করা হতো। যারা দিতে পারতেন না তাদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো।

মনিরুজ্জামানের ঘুষকা-ের ভুক্তভোগী জেলার আলিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের সঙ্গে কথা হয় । তার দাবি, বিভিন্ন সময়ে তাকে আটক করে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন কাজী মনিরুজ্জামান। মনিরুজ্জামানের নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকও। হাসান নামে জেলার স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তাকে তুলে নিয়ে গুমের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা আদায় করেন মনিরুজ্জামান। তার পরিবার এই এসপির কারণে এখন প্রায় নিঃস্ব।

বিভিন্ন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন দেড় বছরে তিনি শতকোটি টাকার বেশি লুট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, মোটা টাকা ব্যয় করে তিনি পোস্টিং নিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। ছিলেন পুলিশের আলোচিত ডিআইজি হারুন উর রশিদের স্নেহভাজন।

এর আগে ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা জেলার সার্কেল এসপি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। সে সময় বিরোধী মত দমনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে জড়িতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি দুটি পৃথক মামলা হয়েছে সাবেক এসপি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram