বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার জন্য প্রণীত ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ আজ বৃহস্পতিবার বাতিল করা হতে পারে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আইনটি করে। এই আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবিত দুই মেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানদের আজীবন বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইনটি বাতিলের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হবে।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা বাতিলের জন্য আইনটি সংশোধন করার প্রস্তাব আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। তবে আইনের সংশোধনীতে যদি উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেয়, তাহলেই এটি কার্যকর হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, তাঁদের সন্তান এবং সন্তানদের স্বামী-স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা সুবিধা, নিরাপদ আবাসনসহ সরকার থেকে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।
এই আইনের ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে—‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৬-এর অধীন ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসনের (ভিআইপি) জন্য যেরূপ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে, সেইরূপ নিরাপত্তা সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণকে আজীবন সর্বস্থানে প্রদান করিবে। ২. উপধারা (১)-এ উল্লেখিত নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার পরিবার-সদস্যগণের মতামতকে প্রাধান্য দিবে।
(৩) জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তাবিধানের লক্ষ্যে সরকার—(ক) তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে উক্ত পরিবার-সদস্যগণের প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে; এবং (খ) উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধাও তাঁহাদিগকে প্রদান করিবে।’ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন হলে এসব সুবিধা বাতিল করা হবে।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১ সালে প্রণীত হয়, যাতে ভিভিআইপি, যেমন—রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের যেকোনো স্থানে সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। যদি কোনো ব্যক্তি এই ব্যক্তিদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে এসএসএফ সদস্যদের তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রয়েছে।
ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করলে কিংবা গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টায় বাধা দিলে, যথাযথ হুঁশিয়ারি প্রদানের মাধ্যমে এসএসএফ তার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগ বা যেকোনো প্রয়োজনীয় উপায়ে হুমকি নিরসন করতে পারে। এই আইনের আওতায় এসএসএফের সদস্যদের কৃতকর্মের জন্য সরকারের পূর্ব-অনুমোদন ছাড়া কোনো মামলা করা যায় না।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
এরপর জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০২১-এর কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের ওপর আগামী রবিবার শুনানির জন্য পরবর্তী দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
গত মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির এই দিন ধার্য করেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান ২৫ আগস্ট রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব।