জিহাদ রানা, বরিশাল ব্যুরো চীফ: দৃষ্টি শক্তি হারানোর শঙ্কায় আছেন বরিশালের চরামদ্দী খান ফজলে রব চৌধুরীর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ তাইজুল ইসলাম সাব্বির (২৭)। বর্তমানে তিনি ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি বরিশালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় প্রতিদিনের মতো গত ৪ আগস্টও বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন।
একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ২২টি গুলি তাইজুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্ধ হয়। এরমধ্যে একটি গুলি তাইজুলের বাম চোখের ভেতর বিদ্ধ হয়। যা এখনো বহন করে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তাইজুল।
আহত তাইজুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই সাথের অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চোখের অবস্থা খারাপ দেখে চিকিৎসকরা শরীরের কোনো অংশের গুলি না উঠিয়ে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেই রাতেই স্বজনরা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যায়। ৫ আগস্ট ভোরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হই। ওদিকে ঐদিনই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থার হযবরল অবস্থা হয়। কোন চিকিৎসা ছাড়াই চোখে শুধু সেলাই করে পরদিন ৬ আগস্ট সকালে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, যে গুলিটি চোখের অনেক ভিতরে চলে গেছে। যা এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এজন্য দেশের বাহিরে যেতে হবে।'
তাইজুল আরও বলেন, 'এ কথা শুনে পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরে তারা আবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। সেখানে চিকিৎসকরা চোখের অবস্থা দেখে ৭ দিন পরে যেতে বলে, ৭ দিন পর আবার গেলে তারা চোখের অপারেশন না করে শুধু ওষুধ লিখে পাঠিয়ে দেয়। সে অবস্থায় ভালো কোনো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে চলে আসি। কোনো চিকিৎসা না পেয়ে এখন চোখের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি।'
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক প্রফেসর ডা. নিশাত পারভীন বলেছেন, তাইজুলের চোখের গুলিটা অনেক ভিতরে ঢুকে গেছে। এখন তার রক্ষা করতে হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে হবে। বিদেশে এ চিকিৎসার জন্য নিতে হলে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এদিকে এতো খরচ বহন করা তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান তাইজুল।
জানা গেছে, তাইজুল শিক্ষার পাশাপাশি বরিশাল রোলার স্কেটিং ক্লাবের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। সে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দী ইউনিয়নের পশ্চিম চরামদ্দী গ্ৰামের লুৎফর রহমানের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন মুদি দোকানী। সংসার চালাতেই নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। চোখের সামনে সন্তানের এই অসহ্য যন্ত্রণা দেখে নির্বাক অসহায় বাবা লুৎফর রহমান।
লুৎফর রহমানের আকুতি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তার সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করে সুস্থ তাইজুলকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। সমাজের বিত্তবানদেরও তার সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
আহত তাইজুলের স্ত্রী আকিরা সিকদার বলেন, ‘বরিশাল মেডিকেল থেকে ঢাকায় প্রেরণ করে চিকিৎসকরা। কিন্তু ঢাকায় গিয়েও ভালো কোনো চিকিৎসা পাইনি। এখন ওর (তাইজুল) চোখের অপারেশনের জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে। যার খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এজন্য সরকার ও দেশবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।