এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। যত্রতত্র মূল সড়কে এমনকি ফ্লাইওভারে উঠে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এমনকি উলটো পথেও আসছে তারা। অন্যরা গাড়িগুলোও মানছে না সিগন্যাল। যেখানে-সেখানে করা হচ্ছে গাড়ি পার্কিং। সড়কে এখন পারমিটবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য। এ যেন নিয়ম ভাঙার মহোৎসব চলছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
তারা বলেন, 'প্রতিদিন যারা সড়ক ব্যবহার করছেন, তারাই নিয়ম ভাঙছেন। এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্দেশে বুলিং করছে। যত্রতত্র পার্কিং, সড়কের পাশে হকার, উলটোপথে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল অমান্য করে আগে যেতে চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়ম ভঙ্গ করছে মানুষ। শিক্ষার্থীরা যে ছয় দিন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছিল, তখন ভয়ে কেউ নিয়ম ভাঙত না। সেই ভয় কেন যেন মানুষের মনে কাজ করছে না! এজন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকছে।'
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ফার্মগেট, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, আসাদগেট ও পান্থপথসহ কিছু পয়েন্টে নির্ধারিত সিগন্যাল না মেনে অনেকে যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশমুখ বন্ধ করে মোড়ে মোড়ে রিকশা, অটোরিকশা ও ছোট ছোট যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব কারণে অলিগলিতে গাড়ির জটসহ প্রধান বড় বড় সড়কে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে দেখা যায়। ট্রাফিক আইন না মানলে জরিমানা বা কেস ফাইল করা, এমন কোনো কিছুতেই তৎপর হতে দেখা যায়নি দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের। ফার্মগেট মোড়ে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা উলটো পথে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই রাস্তা পার হচ্ছে। এতে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি যেতে পারছে না। তবুও পুলিশ কিছু বলছে না রিকশা চালককে।
কথা হয় ফার্মগেটে দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট সাদিক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গত ১৬ দিন হলো এখানে দায়িত্ব পালন করছি। একদমই আইন মানার প্রবণতা নেই মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে অটোরিকশা চালকদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারা যত্রতত্র মূল সড়কে উলটো পথে উঠে যাচ্ছে। এতে করে যানজট আরও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া গাড়িগুলো কে কার আগে যাবে-এ প্রতিযোগিতায় চলে তারাও সিগন্যাল মানছে না। আমরা কিছু বললে মানুষ জড়ো করে হুমকি দেয়। যার কারণে এখন মামলাও দেওয়া যাচ্ছে না।'
বাংলামোটরে ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করা আরেক পুলিশ সদস্য জানান, 'এখনো আমরা আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। চালকরা অনিয়ম করলে কিছু বলতে গেলে আমাদের কথা শুনতে চায় না। আমাদের অনেকের কাছে এখন আর্মস নেই। আমরাও আগের মতো আইন প্রয়োগ করতে পারছি না। বিশেষ করে অটোরিকশাচালকরা এ কাজটা বেশি করছে।'
জানা যায়, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কাউকে বদলি করা হয়নি। আগে যে অভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সড়কে ডিউটি করতেন, বর্তমানেও তারাই ডিউটি করছেন। তবে কী কারণে যানজট হচ্ছে, সেই কারণ খুঁজছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ৫ আগস্টের আগে স্বাভাবিকভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিদিন ট্রাফিক আইনে মামলা হতো গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি। সেখানে বর্তমানে ট্রাফিক আইনে মামলার সংখ্যা হাতে গোনা। মামলার ভয়ে বেশির ভাগ চালক সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করতেন না। কিন্তু ইদানীং ট্রাফিক পুলিশ মামলা দেওয়া হচ্ছে কম। এজন্য বেশির ভাগ চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন।
সড়কে কাজ করা কয়েক জন ট্রাফিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, 'আইন ভঙ্গকারী কাউকে মামলা দিতে গেলে যদি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করে কিংবা আরও বেশি লোক জড়ো হয়ে ভয়ভীতি দেখায়, সেই দায়ভার আসলে এই মুহূর্তে কেউ নিতে চায় না। এজন্য আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য চালকদের নিয়ম মানতে অনুরোধ করি।'