ভারতকে এদেশের জনগণের বুকে গুলি চালানো থেকে ফিরে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় বিগত সরকার ছিল নতজানু সরকার। ওই সরকার আরেক দেশের লোকজনের সঙ্গে মাথা নিচু করে কথা বলতো। এখন থেকে জনগণ যেভাবে কথা বলবে, পররাষ্ট্রনীতি সেভাবে চলবে। আমরা দেশের স্বার্থে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে, মাথা উঁচু করে কথা বলব। যারা সীমান্তে হত্যাকাণ্ড করছে, তাদের একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই। এতদিন আপনারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। এখন আর সেই সুযোগ নেই। এখন কথা বলতে হবে এদেশের জনগণের সঙ্গে। সুতরাং এদেশের জনগণের বুকে গুলি চালানো থেকে ফিরে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেশি কিছু চায় না। তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চায়। তিনবেলা পেট ভরে খেতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ একটা মত প্রকাশ করতে গেলে দশবার ভাবতে হতো। গান গেয়ে জেল খাটতে হয়েছে। কবিতা লিখে জেল খাটতে হয়েছে। একটি কথা বললে পুলিশ, র্যাব বাসাবাড়িতে হানা দিত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। আপনারা কুমিল্লার মানুষ শিখিয়েছেন কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। এই কুমিল্লা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।’
আসিফ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমার জায়গা রাজপথ। কুমিল্লায় আপনাদের কাছে আসতে পেরে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। ৫৩ বছরের জঞ্জাল একমাসে সরানো সম্ভব না। তারপরও দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে। এবার ত্রাণের চাল চুরির কোনো নিউজ চোখে পড়েনি। বিমানবন্দরে কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছে না। ঘুষ বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীর বাংলাদেশ চলবে আপনাদের রূপরেখায়। আপনারা প্রস্তাবনা দিবেন, আমরা কেবিনেটে বাস্তবায়ন করব।’
শহীদদের তালিকা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের তালিকা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এ জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
একই সভায় আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। আমরা আপনাদের মতামত শুনতে এসেছি। আমরা সামনের বাংলাদেশের রূপরেখা সেভাবে দেব, যেভাবে দেশের মানুষ মতামত দেবে।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নিয়ন মনির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জিয়াউদ্দিন আয়ান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমন্বয়ক মাহি খান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রুবেল হোসাইন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কুমিল্লায় আসা প্রতিনিধি মাহির তাজওয়ার। কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন কাজী মহিবুর রহমান ও ইয়াসিন আরাফাত।বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সভা শুরুর আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের পশ্চিম দিকে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাঠের পশ্চিম দিকের বাইরে থেকে দুর্বৃত্তরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে বলে জানান কান্দিরপাড় ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) দীনেশ চন্দ্র দাশগুপ্ত।
এ ছাড়া সভার শুরুতে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল দেখা দেয়। পরে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার মাইকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।