আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তাই এর বিকল্প কী হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা সম্ভব কি না এমন আলোচনা সামনে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকল্প না থাকলে পলিথিন ব্যবহার থেকে সরে আসা কঠিন হয়ে যাবে।
তবে পলিথিনের চেয়ে কিছুটা দাম বেশি হলেও বিকল্প হিসেবে সরকারি উদ্যোগে পাট দিয়ে তৈরি ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই ব্যাগ এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়নি। পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগের চাহিদাও রয়েছে এবং সুপারশপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এটি কিনতে আগ্রহী; কিন্তু বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তাদের অভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে দেখা যায়, পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে এখনো যেহেতু ১৯ দিন সময় রয়েছে, এই সময়ের মধ্যে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার থেকে সরে আসবে। সেভাবেই সুপারশপের উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সুপারশপ স্বপ্ন’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘আমরা নিজেরাই চাচ্ছিলাম কিভাবে পলিথিনের ব্যবহার কমানো যায়। সরকারকে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য সাধুবাদ জানাই।
পলিথিন বাদ দিতে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ ব্যাগ আমাদের লাগে তা কিন্তু এখন প্রস্তুত নেই। এখন আমরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। একই সঙ্গে আমরা ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী স্যাম্পল ও দামসহ যেন সরবরাহকারীরা আমাদের কাছে চলে আসেন।’
সোনালি ব্যাগ নিয়ে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ব্যাগ যদি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারে এবং তিন, পাঁচ বা সাত টাকায় সোনালি ব্যাগ সরবরাহ করতে পারে, তাহলে আমাদের যা ব্যাগ প্রয়োজন হয়, সব তাদের কাছ থেকে নিতে পারব।
গুলশান-২-এ অবস্থিত সুপারশপ ইউনিমার্টের আউটলেট ম্যানেজার মো. মাসুদ বলেন, ‘সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্দেশনা দেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ডেকে ছিল। আমাদের প্রতিনিধি সচিবালয়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে, সেভাবেই আমরা কাজ করব। পলিথিনের পরিবর্তে যা ব্যবহার করতে বলা হবে, সেগুলোই ব্যবহার করব।’
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের মুখে রয়েছে জিনিয়াস সুপারশপ। ওই শপের ম্যানেজার হাসনাইন শাওন বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প বাজারে কোনো কিছু এলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারব। কাপড়ের ব্যাগ আমরা ব্যবহার করি। পাটের ব্যাগ যদি পাওয়া যায় তাহলে আমরা সেটা ব্যবহার করব। যেটা পরিবেশসম্মত, সেটাই ব্যবহার করব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন বিকল্প নেই। আগে পলিথিনের বিকল্প তৈরি করতে হবে। এখন চানাচুর, বিস্কুট, চকোলেট ও রুটির প্যাকেট তৈরি করা হচ্ছে পলিথিন দিয়ে। কম্পানি পর্যায়েও পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে হবে। আমরা চেষ্টা করব যাতে শতভাগ পরিবেশবান্ধব কাজ হয়।’
আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমেদ খান গবেষণা করে পাট দিয়ে সোনালি ব্যাগ তৈরি করেন, যা পরিবেশবান্ধব। দেখতেও পলিথিনের মতো। নিজে গবেষণা করে ২০১৭ সালে এই ব্যাগ প্রস্তুত করেন, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে পার হয়ে গেছে সাত বছর। বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী পলিথিনের বিকল্প তৈরি করার পরও দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনো উৎপাদন সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাট দিয়ে যদি পলিথিনের মতো ব্যাগ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা উচিত। এতে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। চাষিরা পাটের ন্যায্য দাম পাবে।
সোনালি ব্যাগের সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে ড. মোবারক আহমদ খান গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে স্যাম্পলও দিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি পলিথিনের উত্তম বিকল্প। এটি এখন সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার চাইলে এটি দ্রুত তৈরির ব্যবস্থা করতে পারে। এখানে সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা লাগবে। এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা যাঁরা প্লাস্টিকের ব্যবসা করেন। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে। এখন পলিথিনের বিকল্প না করে আইন করলে তা কার্যকর হবে না। এখন আমাদের টেকনোলজি পুরো প্রস্তুত।’
তিনি জানান, এখন প্রতি মিনিটে ৬০ ব্যাগ তৈরি করা যায়। কিন্তু অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে এর উৎপাদন বাড়বে। এখন প্রতিটি শপিং ব্যাগের দাম পড়ছে পাঁচ টাকার মতো। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দাম অনেক কমে আসবে। একই সঙ্গে ব্যাগের গ্রেড অনুযায়ী আলাদা আলাদা মানের তৈরি করা যাবে।