বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই-আগস্ট মাসে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত জুলাই ও আগস্টে ১০.০৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার কম। শতাংশের হিসাবে তা ১২.৮৫ শতাংশ কম। ঐ বছরের জুলাই- আগস্টে এলসি খোলা হয়েছিল ১১.৫১ বিলিয়ন ডলারের। আবার ঐ দুই মাসে ১০.৩৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানির এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১১.৮৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে, আগের অর্থবছরের চেয়ে ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৩.০৩ শতাংশ কম নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কারণ বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, দুই কারণে আমদানির এলসি খোলা কমেছে। প্রথমত, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার সে সময় ব্যাংকও বন্ধ ছিল। তাতে আমদানি- রপ্তানিতে সরাসরি ব্যাঘাত ঘটেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সারা দেশে, যার ফলে সরাসরি আমদানিতে প্রভাব পড়েছে। এলসি কমার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পিছুটান দেওয়ার কথা বলছেন ব্যাংকাররা। আগের মতো তারা বিনিয়োগ করছেন না, তাতে আমদানি কমেছে। এটা কমে যাওয়ার কারণ ডলার দরে অস্থিতিশীলতা। তবে এখন ডলার দরে স্থিতিশীলতা আসছে। এটা বজায় থাকলে আবার বিনিয়োগ বাড়বে।
গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে রূপ নেয় সরকার পতনের গণআন্দোলনে। আন্দোলনের মধ্যে সহিংস পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়া ইন্টারনেট। কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সে সময় ব্যাংকসহ অফিস-আদালতের কার্যক্রমও থেমে গিয়েছিল। পরে ছাত্র-জনতার তুমুল গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের পরিস্থিতিতে সরকারি- বেসরকারি স্থাপনার সঙ্গে বিভিন্ন কারখানাতেও ভাঙচুর হয়। দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়েও কারখানাগুলোতে বিক্ষোভ আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে পুলিশি তৎপরতা না থাকায় নিরাপত্তা সংকটে অনেক কারখানাই বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। এসব কারণগুলোও আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এলসি খোলা কমার প্রশ্নে এক ব্যবসায়ী জানান, আগস্টে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুর হয়েছে। তাতে অনেক দিন ধরে এসব কারখানাও বন্ধ ছিল। তাই আমদানি-রপ্তানি উভয় খাতেই এর প্রভাব পড়েছে।