ঢাকা
২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৩:২৯
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

হলের টাকায় আম কিনে অতিথিকে পাঠান রাবির জিয়া হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন দায়িত্বে থাকাকালে হল ফান্ডের টাকা দিয়ে দুই দফায় আম কিনে কিছু বাসায় আর কিছু ঢাকাস্থ অতিথিকে পাঠায় বলে জানা গেছে। হলের সিনিয়র সহকারী মামুনুর রহমান এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশ টুডেকে। শুধু তাই নয়, হলের টাকা দিয়েই প্রায়ই দুপুরের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি হারপিক, ডেমফিক্স, ওডোনিল, রুম স্প্রে পর্যন্ত ক্রয় করে বাসায় পাঠাতেন তিনি। এছাড়া, ভুয়া ভাউচার, ভুয়া আবেদন, নিজের দোকানের ভাউচার এবং হল সংস্কার ও বিভিন্ন আয়োজনের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একাডেমিক পরিসরেও রয়েছে তার চরম অযোগ্যতা। চারুকলার শিক্ষক হয়েও শিক্ষকতা জীবনে কখনই কোনো শিক্ষার্থীকে হাতে কলমে একটা ড্রইং পর্যন্ত না দেখিয়ে দিয়ে উল্টো নম্বর কম দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আম ক্রয়ের বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সিনিয়র সহকারী মামুনুর রহমান বাংলাদেশ টুডেকে জানান, হলের এক কর্মকর্তার থেকে তিনি আম কিনেন। সেই আমের কিছু অংশ তিনি বাসায় রাখেন আর কিছু অংশ ঢাকায় পাঠান। বাসায় আম খাওয়ার পর ভালো বলে তিনি সুনাম করেন। পরবর্তীতে আরেক দফা আম কিনেন তিনি। সেবার একটু দাম বেশি চাওয়ায় আমগুলো ভালো না বলে জানান। প্রথমে নিজের পকেট থেকে টাকা দিলেও পরবর্তীতে ওই টাকাটি হল ফান্ডের বিলের মধ্যে তিনি সমন্বয় করেন।

হলের টাকায় ৪ হাজার ২০০ টাকায় অনলাইনে দুটি টিস্যু বক্স ক্রয় করেন তিনি। যার একটি নিজের বিভাগের চেম্বারে অথবা বাসায় নিয়ে যান বলে জানান হলের সিনিয়র সহকারী মামুনুর রহমান। এ বিষয়ে মামুনুর রহমান বাংলাদেশ টুডেকে বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে তিনি টিস্যু বক্সের অর্ডার করেন। এর মধ্যে একটি হলে আসছিলো। সেটি আমি গ্রহণ করেছি। পরে আমি দেখি ভাউচারে দুটি টিস্যু বক্স উল্লেখ করা আছে। আরেকটা টিস্যু বক্স হয়তবা উনার বাসায় বা বিভাগে আছে।

এছাড়া, ২০২১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আয়োজিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে তিনি ৮৭টি ট্র্যাকসুট, ৯৭টি ফুল প্যান্ট ও জার্সি এবং ৭৮টি হাফপ্যান্ট ক্রয় দেখান তিনি। এ বিষয়ে সে সময়ে খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘সেই সময়ে যারা খেলোয়াড় ছিলো, তারা সবাই জানে যে আমাদের হল থেকে সর্বোচ্চ ৩৫জন খেলোয়াড় ছিলো। এটা কখনই ৯৭জন বা ৮৭ জন হবে না।’ প্রমাণসরূপ তিনি খেলোয়াড়দের একটি গ্রুপ ছবিও বাংলাদেশ টুডেকে পাঠান। যেখানে একজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকায় ৩২ জনকে দেখা যায়।

শুধু তাই নয়, হল ফান্ডের টাকা দিয়েই ডাইনিং থেকে দুপুরের খাবার খেতেন ড. সুজন সেন। এ বিষয়ে হলের সিনিয়র সহকারী মামুনুর রহমান বলেন, ‘প্রথমদিকে খাবারের বিলগুলো হল ফান্ড থেকেই আমি দিয়েছি। পরবর্তীতে এটা নিয়ে কথা উঠে। ছাত্রদের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর তিনি তার পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন।’ এছাড়া, ‘হল ফান্ডের টাকা দিয়ে হারপিক, ডেমফিক্স, ওডোনিল, রুম স্প্রে ওনার অর্ডারে প্রথমদিকে প্রতিমাসে তার বাসায় পাঠিয়ে দিতাম। পরবর্তীতে একসঙ্গে অর্ডারলি পিয়নের মাধ্যমে তার বাসায় তিন থেকে চারমাসের জন্য এসব পাঠিয়ে দিতাম।’

হলে প্রাধ্যক্ষ থাকাকালিন এসব দুর্নীতির পাশাপাশি ভুয়া ভাউচার, নিজের দোকানের ভাউচারে অতিরিক্ত বিলের মাধ্যমে এবং হল সংস্কার ও বিভিন্ন আয়োজনের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ভুয়া আবেদনের মাধ্যমে ছাত্র কল্যাণ তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৫০০টাকা লোপাট করেছেন তিনি।

হলের দুর্নীতির পাশাপাশি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি অযোগ্য বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চারুকলার শিক্ষক হয়েও তার শিক্ষকতা জীবনে কখনই কোনো শিক্ষার্থীকে তিনি হাতে কলমে একটা ড্রইং পর্যন্ত দেখিয়ে দেননি। উল্টো শিক্ষার্থীদের ভালো কাজগুলো তিনি কোনো কারণ ছাড়াই নিয়ে রাখেন।

এ বিষয়ে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান বাংলাদেশ টুডেকে বলেন, ‘আমার সাড়ে ৬ বছরের শিক্ষাজীবনে আমাদের তিনি কোনো ব্যবহারিক কাজ হাতে কলমে শেখায়নি এবং দেখায়ও দেয়নি। আমাদের কোনো কাজে সমস্যা মনে হলে তিনি সেটা স্কিপ করে গেছেন। ক্লাসের কিছু শিল্পকর্ম মার্কিং শেষে তিনি নিয়ে যান, পরবর্তীতে সেসব শিল্পকর্ম আর ফেরত দেন না। এসব কাজ তিনি পরবর্তীতে নিজের নামে অনেককে উপহার হিসেবে দেন।’

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর রাহুল দেবনাথ বলেন, ‘ড. সুজন সেন তার ইতিহাসে কাউকে কাজ দেখিয়ে দিয়েছেন, এমনটা কখনই হয়নি। ব্যক্তিক্ষোভ থেকে কম নম্বর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি অযোগ্য কাজগুলোকেই বেশি নম্বর দিতেন। কোনো কাজ পছন্দ হলে সরাসরি মার্কিং না করে সেটি চেম্বারে নিয়ে যেতে বলতেন। পরে তিনি সেটা নিয়ে রেখে দেয়। পরবর্তীতে সেটি ফেরত না দিয়ে সেটা কাউকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেয়। পরীক্ষায় তার কোর্সে আমাদের আশানুরূপ নম্বর পাই না আমরা। এছাড়া বিভিন্ন অযুহাতে কোন শিক্ষার্থীর কাজ না নিয়ে সেই কোর্সে তাকে শূণ্য বসিয়ে দেন। মূলত সে চায় ওই শিক্ষার্থী তার পায়ে পড়ুক, অনুরোধ করুক। এটা দিয়ে আসলে তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন।’

হল ও একাডেমিক পরিসরে এসব অযোগ্যতা ও দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে জানতে ড. সুজন সেন’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বিভাগে অযোগ্যতা, হল ও একাডেমিক পরিসরে দুর্নীতি নিয়ে উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা এবং বিভাগের সভাপতি বরাবর দেওয়া প্রমাণসহ প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে ড. সুজন সেনের অপসারণের দাবি জানান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিভাগের জরুরী একাডেমিক কমিটির সভায় ড. সুজন সেনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। তবে গত ৮ দিনেও উপাচার্যকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

তদন্ত কমিটির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এধরণের আরও বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। এজন্য আমাদের একটু সময় লাগছে। তবে এ সপ্তাহের ভিতরেই এগুলোর ব্যাপারে আমরা তদন্ত কমিটি করব।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram