আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পাঁচটি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে। সভাটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে।
এই সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও অন্যান্য উপদেষ্টারা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে একনেকের সভা সাধারণত শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হতো।
এবারের সভার কার্যতালিকায় ছয়টি প্রকল্প থাকলেও অনুমোদনের জন্য পাঁচটি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প সংশোধিত এবং দুটি নতুন।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো একনেক সভা হয়নি। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকারের বিদায়ের পর আর কোনো সচিব না আসায় কর্মকর্তারাও রয়েছেন দ্বিধায়। এমন অবস্থায় একনেক সভায় কোন কোন প্রকল্প তোলা হবে সেটা নিয়েও ছিল সিদ্ধান্তহীনতা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম একনেক সভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সভায় প্রস্তাবিত এবং চলমান প্রকল্প নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা আসতে পারে। একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নির্দেশনা আসতে পারে। সরাসরি জনগণ উপকৃত হবে এমন প্রকল্পই বেশি গুরুত্ব পাবে এবারের সভায়।
সবশেষ গত ২ জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের শেষ একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে গত ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর অনুষ্ঠিত একনেকের প্রায় সব সভায় কমপক্ষে ১০টি প্রকল্প পাস হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেকে অনুমোদনের জন্য যেসব প্রকল্প উত্থাপন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প’ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কার্যতালিকায় থাকা দ্বিতীয় প্রকল্প হলো ‘২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প’। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। নতুন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
একনেক সভার কার্যতালিকায় থাকা তৃতীয় প্রকল্পটি হলো, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত তথ্য আপা নামক প্রকল্প। এটির ব্যয় ১৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। নতুন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এতে ইউনিসেফ অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা দেবে। বাকি ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা সরকার দেবে।
এ ছাড়া কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ‘লাঙ্গলবন্ধ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এটির মোট ব্যয় ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।