ঢাকা
২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৪:৩৪
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র-দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড়, ৩৬০ বিলাসবহুল বাড়ি

গত আগস্টে বাংলাদেশে এমন এক গণঅভ্যুত্থান হয়েছে যখন বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির বিষয়ে সবাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের জেরে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তবে এই অভ্যুত্থানের আগে থেকেই আল জাজিরা আওয়ামী লীগ সরকারের একজন রাজনীতিবিদকে অনুসরণের চেষ্টা করেছিল। তিনি হলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। তার ব্যাপারে অনুসন্ধান করে বিপুল সম্পদের তথ্য বের করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী টিম ছদ্মবেশে তার অন্দরমহলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে এবং তার বিপুল অর্থের সামাজ্য সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য খুঁজে বের করেছে। অভ্যুত্থানের অনেক আগেই আল জাজিরার অনুসন্ধানী টিম আই ইউনিট একটি তথ্য পেয়েছিল। বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী যিনি বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ পান আনুমানিক দেড় লাখ টাকার মতো। কিন্তু তিনি লন্ডনে বিপুল পরিমাণ সম্পদের এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

তার ব্যাপারে তথ্য জানতে আই ইউনিট একটি ছদ্মবেশী দল গঠন করে। ২০২৩ সালে অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থানের আগের বছর এই অনুসন্ধান চালানো হয়। সে সময় আল জাজিরার ওই দলটি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজনের কাছে পৌঁছায় এবং লন্ডনে অবস্থিত তার ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বাড়িতে আমন্ত্রণ পায়।

সে সময় মন্ত্রী অতিথিদের বলেন, এটা খুবই নিরিবিলি একটি বাড়ি। আমার নিরাপত্তার জন্য খুবই সুরক্ষিত এমন একটি বাড়ির প্রয়োজন ছিল। পাঁচতলা ওই বাড়িটিতে তিনি একটি সিনেমাহলও বানিয়েছেন। সেখানে তার একটি নতুন রোলস রয়েস গাড়িও তিনি অতিথিদের দেখান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই কাছের এবং বিশ্বস্ত এই সাবেক মন্ত্রী তারই ছত্রছায়ায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হন এবং ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা তাকে পদোন্নতি দিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রধান করেন।

আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে দেখা যায় সাবেক এই মন্ত্রী বলছেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সত্যি কথা বলতে আমিও। তিনি (শেখ হাসিনা) আমার বস। সাইফুজ্জামানের সম্পদের বৃহত্তম উৎস ব্যবসা এবং বাংলাদেশের অন্যতম ইউসিবি ব্যাংকে তার শেয়ার।

বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রানীতি অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকরা বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারেন না। বাংলাদেশের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্যই এই নীতি। তাহলে সাবেক এই মন্ত্রী কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়লেন?

আই ইউনিট মন্ত্রীর বৈশ্বিক সম্পদের খোঁজে নেমে চমকপ্রদ সব তথ্য পেয়েছে। প্রথমে দেখা হয় ব্রিটেনে তার কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। ফলাফল ছিল চমকে ওঠার মতো। তিনি ডেভেলপারদের কাছ থেকে বাড়ি কেনার জন্য বেশ কিছু কোম্পানি তৈরি করেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যে ২৬৫টি বাড়ি কিনেছিলেন। তিনি মূলত বাড়িগুলোর বেশির ভাগই বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষ ডেভেলপারদের কাছ থেকে কিনেছেন। আবাসন সংকটের কারণে তিনি প্রচুর লাভ করেছেন। কিন্তু তার কেনাকাটা সেখানেই থেমে থাকেনি।

২০২১ সালে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে লন্ডনে আরও বিলাসবহুল সম্পদ কেনেন তিনি। তার বেশির ভাগ সম্পদই লাভের জন্য তিনি ভাড়া দিয়ে থাকেন। এরপর ২০২২ সালে আরও ৮৯টি বাড়ি কিনলে তার মোট বাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬০টি, যার বাজারমূল্য ২৫ কোটি ডলার।

লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হয়ে কাজ করেন চট্টগ্রামের রিপন মাহমুদ। শেখ হাসিনা দেশের বাইরে তার ব্যবসার কথা জানতেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাইফুজ্জামান। তিনি আল-জাজিরার অনুসন্ধানী দলকে বলেছেন, আমার এখানে ব্যবসা আছে, সেটা তিনি জানতেন।

রাজনৈতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিদের সম্পদের পরিমাণ নিয়ে যুক্তরাজ্যে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হয়। তাহলে তিনি কীভাবে এই যাচাইপ্রক্রিয়া অতিক্রম করেছেন তা জানতে তার একটি সম্পত্তি দেখতে আল-জাজিরার একটি গোপন টিম পাঠানো হয়।

সেখানে রিপন মাহমুদ বলেন, আমাদের গ্রাহকের লন্ডনে ৩০০টি বাড়ি আছে। তিনি লন্ডনে আসেন, কয়েকটি বাড়ি কেনেন, আবার চলে যান। লকডাউনের সময় যুক্তরাজ্যে নতুন বাড়ি কেনার জন্য তিনি ২০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করেছেন। তবে তার এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচনী হলফনামায় সঠিক তথ্য প্রদান করেননি। অর্থাৎ তিনি বড় অঙ্কের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন।

রিপন মাহমুদ মূলত একজন স্টেট এজেন্ট যিনি সাইফুজ্জামানকে এই বিশাল সম্পদ কেনার ব্যাপারে সহযোগিতা করে গেছেন। তিনি সাইফুজ্জামানের মতো ধনী গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি বলেন, আসলে আমার গ্রাহকরা এমনি, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা বিশ্বাস করেই টাকা বিনিয়োগ করেন।

আল-জাজিরার অনুসন্ধানী দলের সদস্যরাও নিজেদের ধনী বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবেই অভিনয় করেছেন এবং রিপন মাহমুদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছেন। তারা জানান, চীন থেকে ১০ কোটি ডলার যুক্তরাজ্যের বাজারে স্থানান্তর করতে চান। এভাবেই তারা সাইফুজ্জামানের সম্পদের গোপন তথ্য বের করেন।

এ বিষয়ে বোঝানোর জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে রিপন বলেন, আমার ভালো বন্ধু সাইফুজ্জামান। আপনি যেটা আমার কাছে চাচ্ছেন প্রায় ঠিক সেটাই আমি তার জন্য করেছি। সে সময় রিপনকে সাইফুজ্জামান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি কি দুবাইয়ের তিনি বলেন না, পরবর্তীতে জানতে চাওয়া হয় যে তাহলে কি তিনি চীনের তখনও তিনি বলেন না। উনিও কি বিদেশি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ তিনি বিদেশি এবং তিনি একজন মন্ত্রী, তিনি একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রী। তিনি বুদ্ধিমান। তিনি বড় প্রকল্পে যান না। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কী বলছি। যখন আপনি বড় প্রকল্পে যান, কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে যায়। বড় টাকা, বড় সংখ্যা সবাইকে সতর্ক করে দেয়। আপনি বুঝতেই পারছেন কী বলছি। তিনি এক কোটি আনেন এবং বলেন, আমি নগদে কিনিনি। ব্যাংক আমাকে এই টাকা দিয়েছে।

শুধু লন্ডনেই নয় যুক্তরাষ্ট্রেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। পাঁচটি নিউইয়র্কের প্রধান এলাকায় এবং চারটি নদীর ওপারে নিউ জার্সিতে।

আরও কয়েক দফা সাক্ষাতের পর রিপন স্বীকার করেন, তার সবচেয়ে বড় গ্রাহক সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসবেন বলেও জানান এবং তিনি বাংলাদেশের ভূমিমন্ত্রী সেটাও উল্লেখ করেন। রিপনই চার বছর আগে লন্ডনে সাইফুজ্জামানের জন্য সবকিছু ঠিক করেছেন। প্রতিবছর তিনি রিপনের মাধ্যমেই ১০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেন।

রিপনের মাধ্যমেই সাইফুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আল জাজিরার টিম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ছাড়াও দুবাইয়ে তার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের মধ্যে সেখানে অন্তত ৫৪টি সম্পদের মালিক হয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram