বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ধর্মীয় পরিচয়ে বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নন, সবাই বাংলাদেশি। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশ-বিদেশের সব স্তরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান। তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদ মুক্ত নয়। কোনো অপশক্তি যাতে গণ অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং সাফল্যের ধারা ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দের যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ফেনীর কামাক্ষা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেনগুপ্ত, গৌড় সিনহা, চট্টগ্রাম ইসকনের চারু চন্দ্র্র দাস ব্রহ্মচারী, অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জে এল ভৌমিক, পান্না লাল দত্ত, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নির্মল রোজারিও প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গুম, খুন অপহরণ কিংবা আয়নাঘরের ভীতিমুক্ত পরিবেশে অনেক বছর পর আতঙ্কমুক্ত ও স্বাধীনভাবে আজকের এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খুব সহজেই কিন্তু আজকের এরকম একটি সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়নি। এই স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিগত ১৫ বছর ধরে দেশের সব ধর্ম-বর্ণের গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আমাদের এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় লাখ-কোটি জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাজারো শহীদের আর অসংখ্য ভাই-বোনের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ স্বাধীন ও স্বস্তির পরিবেশ আমরা অর্জন করতে পেরেছি। স্বাধীন গণতন্ত্র আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এ রক্তক্ষয়ী গণ অভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- দেশের জনগণ সারাজীবন তাদের এ আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
তারেক রহমান বলেন, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ পতিত সরকার নিজেদের শাসন-শোষণ থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন সময়ে দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। এখনো চালাচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু এদের কিছুতেই সফল হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। এ সময় দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে- এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে- দলমত ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। তিনি বলেন, আগামী মাসেই আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উৎসব উপলক্ষে আমি আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা প্রত্যেকে উৎসব উদযাপন করুন নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেকটি নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে বিনা বাধায় উপভোগ করবে এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।
কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিল না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।
তারেক রহমান বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ- গত ১৫ বছরে যা হয়েছে আপনারা দেখেছেন। সারা দেশে আইনের শাসন ছিল না বলেই কিন্তু প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকটা নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আমি মনে করি নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রত্যেকটি নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকর শক্তিশালী অস্ত্র। যত দিন পর্যন্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান অর্থাৎ দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। পাশাপাশি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সর্বস্তরের মানুষই দাঁড়িয়েছিলেন। এখন আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছি। আমরা সেটিও অর্জন করেছি। সেটাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এখানে যারা চক্রান্ত করছে আবার সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চক্রান্তকারীদের পরাজিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করা। আমরা যে একটা ভয়াবহ দানবকে একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছি, তারপর এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে। চক্রান্ত হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এবং দুঃখজনকভাবে আপনাদের এর ভিতরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।