জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সভায় যোগ দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আরেকটি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অনেক আশার প্রতিফলন এ সফরে ঘটবে বলে আশা দেশবাসীর। ইউনূস ২৪ সেপ্টেম্বর সাইড লাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে। তারা বিশ্বাস করেন, ড. ইউনূস ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। তারা রপ্তানিকারকদের জন্য স্থগিত জিএসপি বাণিজ্য সুবিধা পুনরুদ্ধারের বিষয়টিও দেখতে চান।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো তা ১০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। ২০২৪ বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
মার্কিন সরকার যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করতে চায়, তাহলে তাকে জিএসপি বাণিজ্য সুবিধার অধীনে পোশাক পণ্যে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।- বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য জিএসপি বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করে। দীর্ঘ ১১ বছরে পোশাক খাতে নিরাপত্তা ও শ্রমের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হলেও বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আর ফিরে পায়নি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। মার্কিন সরকার যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করতে চায়, তাহলে তাকে জিএসপি বাণিজ্য সুবিধার অধীনে পোশাক পণ্যে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।’
শ্রমিক ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার উন্নতির পরও কেন তৈরি পোশাক পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না তা বাংলাদেশকে জিজ্ঞাস করতে হবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এমনকি পাকিস্তানও জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এটি টেবিলে রাখা উচিত।- ড. জাহিদ হোসেন
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় মার্কিন সরকার তার দেশ থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাকের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিতে পারে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৮ আগস্ট। সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য তিনি দেশবাসী ও বৈশ্বিক নেতাদের কাছে সহযোগিতা চান। এ বৈঠকে তিনি বিশ্ব নেতাদের কাছে তার দাবি তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবেন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক- উভয় বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কোন প্রেক্ষাপটে তারা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং অর্থনীতির পাশাপাশি জনগণের উন্নতির জন্য তারা কী করতে চান তা নিয়ে আলোচনা করবেন। কীভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করা যায় এবং মার্কিন সরকারের কাছ থেকে আরও সাহায্য পাওয়া যায়, সে বিষয়ও তুলে ধরবেন বলে মনে হচ্ছে।’
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির রূপরেখা আলোচনায় থাকা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিপুল উদ্বৃত্ত নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে তারা বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব জানতে চাইবেন বলে করি।’
ড. জাহিদ বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বড়, তারা কীভাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন তার পরিকল্পনা চাইবে। বাংলাদেশকে ব্যাখ্যা করতে হবে যে কীভাবে আমাদের এখানে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবেন। বাংলাদেশকে সেসব পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুযোগ নিতে হবে, যেগুলো মার্কিন সরকার অন্য দেশকেও অনুমতি দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার উন্নতির পরও কেন তৈরি পোশাক পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না তা বাংলাদেশকে জিজ্ঞাস করতে হবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এমনকি পাকিস্তানও জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এটি টেবিলে রাখা উচিত।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, মার্কিন সরকার যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করতে চায়, তবে তাদেরও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সহায়তা দেওয়া উচিত। আমেরিকান অঞ্চলের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের আসিয়ানে প্রবেশের বিষয়েও সাহায্য করতে পারে মার্কিন সরকার।’