তারেক রহমানের অপেক্ষায় বিএনপি। কবে কখন তিনি দেশে ফিরবেন- সেই আশায় প্রহর গুনছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। দলীয় সূত্রগুলো বলছে- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্তটি নেবেন। তবে নেতা-কর্মীরা চান তিনি দ্রুতই দেশে ফিরে আসুন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দ্রুতই দেশে ফিরতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা অলরেডি দ্রুত চলে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি বীরের বেশেই ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বদেশে ফিরবেন। দল আর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকই নন, সারা দেশের মানুষ তাঁর আগমনের অপেক্ষায় আছেন।’
জানা গেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁর আইনজীবীরা এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তার মধ্যে একটি মামলা বাদী প্রত্যাহার করেছেন। অন্যগুলোর আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপেক্ষায়। সুচিকিৎসার্থে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডনের একটি অ্যাডভান্স হেলথ সেন্টারে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে। চেয়ারপারসন সেখানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করতে পারেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাঁর কিছু মামলা-মোকদ্দমা এবং আইনি বিষয় আছে। এগুলো আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিরসন করতে চাই। তারপর আমার মনে হয় তিনি দেশে ফিরে আসার প্ল্যান-প্রোগ্রাম করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অপেক্ষায় সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াতেই তিনি সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরে আসবেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমান এই মাটির সন্তান। তিনি এখানে বড় হয়েছেন, লেখাপড়া করেছেন। তিনি অবশ্যই তাঁর নিজ দেশে ফিরে আসবেন। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দেওয়া মিথ্যা মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর মধ্যে বেশ কিছু মিথ্যা মামলা এখন বাদীরাই প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেছেন। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। এই নিষেধাজ্ঞার জন্য যিনি আবেদন করেছিলেন, তিনি তার মামলা এরই মধ্যে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তথাকথিত একুশে আগস্টের মামলাসহ চারটি মামলায় তাঁকে দন্ড দেওয়া হয়েছে নিম্ন আদালত থেকে। এর মধ্যে দুর্নীতির মিথ্যা মামলাও আছে। সেগুলো আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় দেখছি। বিচার-বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন ইনশা আল্লাহ।
যে প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : তারেক রহমান দেশ ছাড়েন ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। যাবজ্জীবনসহ চার মামলায় তাঁকে দেওয়া হয় সাজা। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় উচ্চ আদালত থেকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ওইদিনই দেশের সব গণমাধ্যম তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার শুরু করে। তারেক রহমানের সম্মতি পেলে তাঁর সাজা স্থগিত চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে তারেক রহমানের সাজা স্থগিতের আবেদন করা হবে সরকারের কাছে।
এ ধারা প্রয়োগ করেই বেগম খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, আইনি প্রক্রিয়ায়ই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। কবে নাগাদ ফিরবেন সে সিদ্ধান্তও তিনি নিজেই নেবেন। ব্যারিস্টার কায়সার বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো পথে ফিরবেন না তারেক রহমান। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলার রায় হয়েছে, সেগুলো তিনি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন। যেগুলোর রায় হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে আইনগতভাবে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্ধ-শতাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫টি মামলার বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু মামলা স্থগিত রয়েছে। তাঁকে পলাতক দেখিয়ে এসব মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। দীর্ঘ ১৬ বছর সপরিবারে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস পালন করেছে বিএনপি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোররাতে তারেক রহমানকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন রিমান্ডে নির্যাতন ও টানা ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর সরকারের সাজানো সবকটি মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মুক্তি পান। এর পর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি চিকিৎসার্থে বিদেশে যান।