শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে শপথ নিয়েছেন। দুই বছরেরও বেশি সময় পর প্রেসিডেন্ট
পেলো লঙ্কানরা।
আজ সোমবার সকালে কলম্বোতে ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে শপথ নেন।
শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে এই বামপন্থী নেতা বলেন, এই জয় আমাদের সকলের এবং শ্রীলঙ্কার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে।শ্রীলঙ্কার উৎপাদন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
৫৫ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি বাজিকর নই, জাদুকরও নই। এমন কিছু আছে যা আমি জানি এবং জানি না, তবে আমি সর্বোত্কৃষ্ট পরামর্শ চাইব ও আমার সেরাটা করব। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।
রোববারের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, প্রাপ্ত ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় দফায় দুই শীর্ষ প্রার্থীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ ভোট গণনা করে। দিশানায়েকে প্রথম গণনায় ৫,৬৩৪,৯১৫ ভোট এবং দ্বিতীয় গণনায় ১০৫,২৬৪ ভোট পেয়েছেন।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী সামাগি জনা বালাওয়েগার প্রার্থী সজিথ প্রেমাদাসা প্রথম গণনায় ৪,৩৬৩,০৩৫ ভোট এবং দ্বিতীয় গণনায় ১৬৭,৮৬৭ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম "এক্স" (প্রাক্তন টুইটার)-এ এক পোস্টে দিশানায়েকে বলেন, "আশা ও প্রত্যাশায় ভরা লাখ লাখ চোখ আমাদের এগিয়ে নিতে প্রেরণা জোগায় এবং আমরা একসাথে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস নতুন করে লিখতে প্রস্তুত।"
পোস্টে আরও বলেন, "এই স্বপ্ন শুধুমাত্র একটি নতুন সূচনার মাধ্যমে বাস্তবাযয়িত হতে পারে। সিংহলি, তামিল, মুসলিম ও সমস্ত শ্রীলঙ্কার ঐক্য এই নতুন সূচনার ভিত্তি। আমরা যে নতুন রেনেসাঁ চাই তা এই সম্মিলিত শক্তি ও স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবে।"
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে মোট ২,২৯৯,৭৬৭ ভোট পেয়ে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সামাগি জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
এর মধ্য দিয়ে গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরের বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল শ্রীলঙ্কা। অনূঢ়া কুমারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে পরিবারের টানা দেড় দশকের বেশি সময়ের একক আধিপত্যের অবসান ঘটল।
১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কা শাসন করেছে দুটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বা তাদের জোট বা এরই কোনো অংশ। এর মধ্যে একটি রাজাপাকসা পরিবারের নেতৃত্বাধীন দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। দলটি থেকে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসা। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগের আগে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসা।