শুল্কছাড়ের পর পাইকারি বাজারের আড়তগুলো ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এ ছাড়া মিসর, পাকিস্তান ও মায়ানমার থেকেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না। অথচ ভোক্তাদের প্রত্যাশা ছিল, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ এলে দাম কমে ৫০ টাকায় চলে আসবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ভারতীয় পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এ ছাড়া উৎপাদন স্থলে পণ্যটির দাম বাড়তি।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এতে দেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। দেশে আরেক দফা বেড়ে যায় পণ্যটির দাম। এর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ৪ মে ন্যূনতম ৫৫০ মার্কিন ডলার রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে ভারত। এত দিন সেটা জারি ছিল।
তখন বিকল্প দেশ মিসর, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পণ্যটি আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া টনপ্রতি পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৪০৫ ডলার নির্ধারণ করে ভারত সরকার। তখন থেকে দেশের ব্যবসায়ীরা নতুন করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এখন দেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যটি আসছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৮-১০০ টাকা কেজি। এই পেঁয়াজের সরবরাহ খুবই কম। সমুদ্রপথে মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮২-৮৩ টাকা, একই পথে আসা পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পণ্যটির দর এখন ৮০-৮২ টাকা। পাইকারি বাজারে সবচেয়ে কম দাম পাকিস্তানি পেঁয়াজের। এই পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতেও মিলছে। এ ছাড়া পাশের দেশ মায়ানমার থেকে স্থলপথে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকা দরে, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-৯৮ টাকায়। পাইকারি বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমলেও পণ্যটি ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
খুচরা বাজারের বিক্রেতারা ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজার থেকে সংগ্রহ করে মিক্স করে বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ওই হিসাবে খুচরা বাজারে দাম আগের মতোই রয়েছে। দামের তেমন একটা হেরফের হয়নি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতাদের চাহিদা দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। এ দুই ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ খুবই কম। আর পাকিস্তান, মিসর ও মায়ানমারের পেঁয়াজ বেশি ব্যবহার করেন খাবার হোটেলে। মূলত ভারতীয় পণ্যটির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ায় দাম তেমন একটা কমছে না।
খাতুনগঞ্জের মায়ের দোয়া ট্রেডিংয়ের কর্ণধার রনি বিশ্বাস বলেন, ‘শুল্কছাড়ের পরও দাম কমছে না। কারণ ভারত থেকে বেশি দামে পণ্যটি সংগ্রহ করতে হচ্ছে আমাদের। মূলত উৎপাদনস্থলে দাম বাড়তি থাকায় শুল্কছাড়ের পরও দামের তেমন হেরফের হচ্ছে না। শুল্কহার না কমালে ভারতীয় পণ্যটির দাম আরো বেশি হতো।’ বর্ডার থেকে কত টাকা দিয়ে সংগ্রহ করছেন ভারতীয় পেঁয়াজ এমন প্রশ্ন করা হলে রনি বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বর্ডার থেকে ৯২-৯৩ টাকায় সংগ্রহ করছি। এখন ১৩ টনের একটি ট্রাক ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে খাতুনগঞ্জে আনছি। অথচ আগে ভাড়া ছিল ২৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। সব বাড়তি খরচ যোগ করে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি সর্বোচ্চ ৯৮ টাকা কেজি।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, শুল্কছাড়ের পর পাইকারিতে তিন টাকা পর্যন্ত কমলেও পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকার নিচে আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ এখন বাড়তি পরিবহন খরচ, শ্রমিকদের মজুরিও বাড়তি। এসব কারণে শুল্কছাড়ের পরও দাম কমছে না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পেঁয়াজের আড়তদার সোলায়মান বাদশা বলেন, বাজারে পাকিস্তান, মিসর ও মায়ানমারের পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।