ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:৪৩
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে যা অর্জন করলেন ড. ইউনূস

বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়ে দেশে ফিরেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এ সফরে তিনি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন। খবর বিবিসি বাংলার।

নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একপ্রকার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এই সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটেছে।

বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এই সফরে সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘এই সফরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা গেছে এবং তাদের কাছে আস্থার জায়গাটা তৈরি করা গেছে।’

এছাড়াও অর্থনৈতিক সংস্কারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতিসহ নানা কারণে এই সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের এক ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি সফরসূচিতে মিল না থাকায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী দুটি দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এ মূহুর্তে একটি বৈঠক হলে তাতে সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতো।

যে সব কারণে গুরুত্বপূর্ণ সফর

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে এবারে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মাত্র ৪ দিনের এই সফরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে।

এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্টসহ অধ্যাপক ইউনূস অংশ নিয়েছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাপক ড. ইউনূস এই সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে যে সব মিটিং করেছেন তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে অংশ নিয়েছে তার সবগুলোই এখনকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও প্রয়োজনের আলোকে হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন এই কূটনীতিক।

অর্থনৈতিক সংস্কারে সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত বুধবার অধ্যাপক ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক কাজের জন্য বিশ্ব ব্যাংক অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে তার সুফল সাধারণ মানুষ পায় নি। যে কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সব ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু তারা চাইছে এই সংস্কার যেন হয় গণতান্ত্রিকভাবে, যেটাকে টিকিয়ে রাখা যায়। এর সুফল যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌছায়।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসার প্রসঙ্গ

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে বৈঠকে দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা ফেরত আনতে টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করার বিষয়ে জোর দেন।

এ সময় তিনি বিশ্বব্যাপী পাচার হওয়া অর্থ নিজ নিজ দেশের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও কামনা করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে কিংবা সুসম অর্থনীতি চালু করতে হলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেই হবে।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশে থেকে টাকা পয়সা পাচার হয়ে গেছে। সে সব দেশগুলোকেও চাপ দিতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখতে হবে।’

সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক।

চীনের সঙ্গে বৈঠক, হয়নি ভারতের সঙ্গে

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক হয় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের।

এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার ঘোষণা দেয় দেশটি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অন্যান্য বিষয়েও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জায়গায় হয়তো আমাদেরও চিন্তা ভাবনার সুযোগ রয়েছে।’

এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের বৈঠক হতে পারে এমন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনাও চলছিল।

তবে শেষ পর্যন্ত দুই সরকার প্রধানের সময় না মেলার কারণে বৈঠক হবে না বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এমন অবস্থায় একটি বৈঠক করার জন্য ভারতেরও এক ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘প্রতিবেশী দুই সরকার প্রধানের মধ্যে দেখা হলে হয়তো ভাল হতো। এতে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক ঝালিয়ে নেওয়া যেত। তবে, এখনই বৈঠক না হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে যে খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেটিও বলা যাবে না।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram