সমবায় ব্যাংকের লকার থেকে ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। গতকাল রবিবার কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, ‘সমবায় ব্যাংকের বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যাঁরা একসময় ব্যাংকে ছিলেন, তাঁরাই এসব সম্পত্তি বেদখল করে বসে আছেন।
তাঁদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যাঁরাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’তিনি বলেন, সমবায় দাঁড়াতে পারছে না, কারণ সমবায়ীদের মধ্যে সমবায়ের মনমানসিকতার অভাব রয়েছে। সমবায়ের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরা শুধু কমিটি আর দায়িত্বে আসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। কিন্তু সমবায়ের কল্যাণে কোনো কাজ হচ্ছে না।
সমবায়ীরা শুধু কমিটিতে ঢুকতে চান। কিন্তু সমবায়ের কী উন্নয়ন হলো, সেটির দিকে তাঁদের লক্ষ নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার দরকার রয়েছে।
বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের স্বপ্নের বাস্তবায়িত রূপ দেখতেই বার্ডে এসেছেন বলে জানান হাসান আরিফ। তিনি জানান, আখতার হামিদ খানের দর্শন ছিল সমবায়, গ্রামীণ উন্নয়ন, গ্রামীণ মানুষের আর্থিক উন্নয়ন।
এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে এবং বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।তিনি বলেন, ‘আবার মন্ত্রণালয়ে দেখি, এগুলো নিয়ে কোথায় যেন স্থবিরতা বিরাজ করছে। বার্ডের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সংযোগ ঘটানো গেলে আশা করি পল্লী উন্নয়নের একটি গতি আসবে। পল্লী উন্নয়নের কোথায় কী আছে, সেগুলো ফাইলে বন্দি থাকুক, সেটা আমি চাই না। তাই কোথায় কী আছে, সব কিছু আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। বর্তমানে কিভাবে বা কোথায় সংস্কার দরকার, সেটা জানার চেষ্টা করছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বার্ডে এসেছি।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোসাম্মৎ শাহানারা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক, বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। পরিকল্পনা সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের ১১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বার্ডের বর্তমান কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো বার্ড পল্লীর জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বার্ড গত অর্থবছরে দুটি আন্তর্জাতিক কোর্সসহ মোট ১৯৫টি কোর্সের মাধ্যমে আট হাজার ৩৪১ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের বনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিশেষ বনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের তৃণমূল পর্যায়ের সুফলভোগীদের জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্স।
মহাপরিচালক জানান, গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বার্ড গত অর্থবছরে ১৫টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি গবেষণা গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বার্ড বর্তমানে সরকারের রাজস্ব খাতের অন্তর্ভুক্ত সিভিডিপি তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া বার্ড নিজস্ব অর্থায়নে ১৬টি প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বার্ডের ৫৭তম পরিকল্পনা সম্মেলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আবদুল্লাহ আল মামুন।
সুত্র: কালের কন্ঠ