গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবারো লিফট দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বর্তমানে এ হাসপাতালের লিফটগুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। শিশু সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে লিফটে উঠতে গিয়ে তিনি হাসপাতাল ভবনের ১০ম তলা থেকে বেইজমেন্টে পড়ে নিহত হন কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি এলাকার মো.জাহিদুল ইসলাম (৪০)।
এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল ইসলাম।
নিহতের শ্যালক লিমন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত তিনদিন আগে চারদিন বয়সের শিশু সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান জাহিদুল ইসলাম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে ওইদিন হাসপাতালের ১০তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ওই ওয়ার্ডে থেকে শিশুটিকে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে সন্তানের ঔষধ কেনার জন্য নিচে নামতে ১০ তলার ১নং লিফটের বোতাম টিপেন। এসময় লিফটটি ১১ তলায় অবস্থান করলেও ১০ম তলার দরজা খুলে যায়। দরজা খুলে যাওয়ায় তিনি লিফটে উঠার জন্য ভিতরে পা বাড়াতেই ওই তলা থেকে ফাঁকা স্থান দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচের বেইজমেন্টে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় লিফটে উঠার জন্য তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার শ্যালিকাসহ অন্য কয়েকজন রোগীর স্বজন অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে রক্ষা পান।
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নিহতের পাশের বেডের স্বজন মাছুম ও নিহতের শ্যালিকা বলেন, আমরা সবাই ডাক চিৎকার করে দৌড়ে নিচে নেমে খোঁজাখুঁজি করেও কোন লিফটম্যান বা সিকিউরিটির কাউকে পাইনি। প্রায় আধা ঘন্টা পর একজন অপারেটরকে পেয়ে নিচে র দরজা খুলে অন্যান্যদের সহায়তায় জাহিদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তারা আরও বলেন, এই লিফটগুলোর সমস্যা নিয়ে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের লোকজনকে বলা হলেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের লিফটগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, জাহিদুল ইসলাম অনাকাঙ্খিতভাবে লিফট থেকে পড়ে নিহত হয়েছেন। এ হাসপাতালে ৬টি লিফট রয়েছে। লিফটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণে বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আশরাফুল আলমকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে হাসপাতালের একজন সহকারী পরিচালকসহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুত) নিয়াজুর রহমান ও ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ মে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলায় লিফটের পাশের একটি ফাঁকাস্থান দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে জিল্লুর রহমান (৭০) নামে অপর এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি এমনকি তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি। এর আগে চলতি বছরের ১২ মে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে মমতাজ (৫০) নামের অপর এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এ হাসপাতালে গত প্রায় ৫ মাসে লিফট দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।