টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের টঙ্গীস্থ সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজের সদ্য পদত্যাগকারী অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ভুয়া সার্টিফিকেট, তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত হওয়া, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি এই অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদ অর্জনের ফিরিস্তি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৭৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা। একই অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন শিক্ষকরা। এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অভিযোগটি দুদকের নথিভুক্ত হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের পদ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। প্রতিষ্ঠানে তিনি ২০০৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ২০ বছর চাকরিকালীন সময়ে লুটপাটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। শুধু বিগত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটির অডিটে তার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, কলেজের পাশেই তিনি ছয় তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। উচ্চ শিক্ষায় দুই ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছেন। উত্তরায় কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের পূবাইলের বিনদান গ্রামে পুরাতন বাড়ি ভেঙ্গে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। রয়েছে ৩৫ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার।
দুদকে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ওয়াদুদুর রহমান ২০০৭ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটানা ১৭ বছর নিয়মিত কমিটির পরিবর্তে পছন্দের ব্যক্তি দ্বারা গঠিত এডহক কমিটি দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিকে আড়াল করা। ২০০৪ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করেন। তিনি পঞ্চম, অষ্টম, দশম শ্রেণি, দশম ভোকেশনাল এবং দ্বাদশ শ্রেণির বিশেষ ক্লাস থেকে অবৈধভাবে কোনো স্বাক্ষর ব্যতীত ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে।
২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড-১৯ এর কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষাবোর্ড পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ফেরত দেয়। সেই টাকা শিক্ষার্থীদের কাছে ফেরত না দিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। দুদকে জমা দেয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্ন শ্রেণিতে পাঠ্য পুস্তকের বাইরে দুইটি বই অন্তর্ভুক্ত করা আছে। তার পছন্দের প্রকাশনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসব বই অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কলেজ ও স্কুল শাখায় কিছু সংখ্যক তার নিজস্ব প্রার্থীকে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে প্রভাষক ও শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাছাড়া সরকারি অডিট নিষ্পত্তির জন্য ২০১৮ সালে অডিট অফিসারকে ১৭ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে কয়েক কোটি টাকার অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করেছেন।