১০ দিন ধরে সচিব ছাড়াই চলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কার্যক্রম। তবে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জননিরাপত্তার পাশাপাশি সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বও পালন করছেন। এতে দুই বিভাগ আবারও এক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে ভাগ করার পর নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব দেখা যায়। পাসপোর্টের দায়িত্ব পালনে বিদেশের মিশনে গিয়ে দায়িত্ব পালনকে কেন্দ্র করেই এই দ্বন্দ্বের শুরু, যা একসময় ব্যাপক আকার ধারণ করে। ফলে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার দুই বিভাগকে এক করার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।
দ্বন্দ্ব নিরসনের ওপর ভিত্তি করে দুই বিভাগ এক করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের দুটি পৃথক ওয়েবসাইট রয়েছে। দুটির মধ্যেই সচিব হিসেবে নাম রয়েছে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের। গত ২ অক্টোবর সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আবদুল মোমেন।
এর আগে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন মশিউর রহমান। দুই বিভাগ এক হওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে সুরক্ষা সেবা বিভাগ চালু হওয়ার সময় এই বিভাগে অনেকেই যেতে আপত্তি জানান। সবাই জননিরাপত্তা বিভাগে থাকতে চেয়েছিলেন। পরে অনেকটা জোর করেই তাঁদের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বদলি করা হয়।
কিন্তু এর পরই নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের কপাল খুলে যায়। তাঁদের সুযোগ মেলে বিদেশের মিশনে গিয়ে দায়িত্ব পালনের। আর এতে নিজেদের বঞ্চিত মনে করতে থাকেন জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা। এ নিয়েই শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
একসময় সুরক্ষা সেবা বিভাগে যেতে না চাওয়া কর্মকর্তারা বিদেশে যেতে সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদবির করতে থাকেন। এমনকি তাঁরা উচ্চ আদালতেও যান। উচ্চ আদালতের রায় তাঁদের পক্ষে এলে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এর বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দুই বিভাগের কর্মীদের সমান হারে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পরিপত্রও জারি করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতেই আবারও এক বিভাগ করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, এত গবেষণা করে যে বিভাগ করা হয়েছে, সেটি আবার এক করে ফেললে কাজের গতি কি বাড়বে? দুটি বিভাগের রয়েছে আলাদা প্রশাসন বিভাগ, আইন বিভাগ। অনেক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে। সেগুলোর কী হবে? তাঁর মতে, একটা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হবে।
এদিকে জননিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি যখন যোগদান করেছি তখন অবিভক্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছিল। পরে বিভাগ করার কারণে জননিরাপত্তা বিভাগে থাকায় আমরা বিদেশে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। আমরা তো বিভাগে যোগদান করিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করেছি। এ কারণে আমরা চাই দুই বিভাগ এক হয়ে যাক। তাহলে বৈষম্য থাকবে না।’
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ নামে দুই ভাগ করা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড, তদন্ত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে রয়েছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, কারা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।