শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে কুমিল্লা জেলায় এবার ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৭ জন কিশোরীকে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী এ বিশেষ টিকা কার্যক্রম চলবে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হল রুমে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. নাসিমা আকতার বলেন, নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি টিকা সংযোজন করেছে। এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিয়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সার রুখে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি ছাত্রী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের জন্য পরিচালিত হবে। কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার একযোগে এই কার্যক্রম চলবে।
তিনি আরও বলেন, এ জরায়ুমুখের ক্যান্সারে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ থেকে ১৩ হাজার নারী মারা যান। সারা পৃথিবীতে নারীর জরায়ুরমুখ ক্যান্সারে মৃত্যু বিবেচনায় এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ৷ আরও ভয়ানক তথ্য হচ্ছে এটি বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে নারীরা যদি এ টিকা দিতে পারে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদে থাকবে। তাই সব নারীকেই টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। মূলত হিউম্যান পেপিলেমো ভাইরাসের প্রজাতি প্রায় ১০০টির উপর রয়েছে। সারভারিক্স ১৬ ও ১৮ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে জরায়ুমুখের ৭০ ভাগ ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়। তবে, হিউম্যান পেপিলেমো ক্যান্সারে রূপ নিতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। টিকা নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, সেগুলোতে কান না দেওয়ার অনুরোধ। সব ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় না, তবে জরায়ুমুখের ক্যান্সার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা যায়। তবে, যদি কারো ১৫ বছর পার হয়ে যায় কারো, তাহলে তাদেরকে কিনে টিকাটা দিতে হবে।
এসময়, সংবাদ সম্মেলনে এইচপিভি ক্যাম্পেইন বিষয়ে সার্বিক কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেহেদী হাসান।
তিনি জানান, কুমিল্লায় জাতীয় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৪ ২৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে কর্মদিবস চলমান থাকবে। এই সময়ে জেলার মোট ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৭ জন ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এই টিকা দেওয়া হবে। এরমধ্যে ৫ হাজার ২১৯টি বিদ্যালয়ের ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী ও স্কুল বহির্ভূত ১০ হাজার ৩২৭ জন কিশোরীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। জেলায় ইপিআই অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারিত হয়েছে ৪ হাজার ৭০৪ টি ও স্থায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ হয়েছে ১৯টি। টিকা পেতে নিবন্ধন করতে হবে www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ প্রতিনধি ডা. বেনজীর সুলতানা ও ডব্লিওএইচও প্রতিনিধি ড. সাবরিনা ইয়াসমিন। উল্লেখ্য, এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত। তবে নিরাপদ ও কার্যকর এবং ব্যক্তি উদ্যোগে এটা ক্রয় করতে গেলে তিন থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।