রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ অথবা অপসারণ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের চাপ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য ও আইনী জটিলতায় বেকায়দায় পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত দুই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের ক্ষেত্র প্রায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির একটি প্রতিনিধির দল বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান এই মুহূর্তে তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণ চান না।
নতুন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টির বিপক্ষে দলীয় অবস্থানের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানায় বিএনপি। তবে শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দফা দাবি পুর্নব্যক্ত করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুউদ্দিন কত সময় টিকতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আবারো আলোচনা হতে পারে, সেখান থেকে আসতে পারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুররীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।
সোমবার রাষ্ট্রপতির এই কথা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। তাকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।
তবে একাধিক সূত্র বলেছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এটা বুঝিয়েছেন যে, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে তার ওই আলাপচারিতা ছিল ‘নিছকই অনানুষ্ঠানিক’ বিষয়, আর তার কথাও ‘ঠিকঠাক’ প্রকাশিত হয়নি, তার মন্তব্য ‘অন্যভাবে’ দেখানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের বাইরে দিনভর বিক্ষোভের পর সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। সেখানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নামও ভাসছিল। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টার বৈঠকের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিচারপতি আহমেদই হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা।
সূত্র বলেছেন, সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রেখে বিচার বিভাগ ছাড়ার আগ্রহ প্রধান বিচারপতির নেই। বিচার বিভাগের সংস্কার আর অন্যান্য যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন, সেসব নিয়েই তিনি বেশি মনোযোগী।
অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের আলোচনা বুধবার হঠাৎ করেই অন্য দিকে মোড় নেয়, যখন তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়’। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বুধবার এ বিষয়ে কথা বলার আগেই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে কোনো জটিলতা তৈরি হোক, তারা তা চান না।
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান তার দলের স্থায়ী কমিটির অন্য দুই সদস্যকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করবো।
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পরে গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই হোক শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয়, বাধাগ্রস্ত হয় বা কণ্টকাকীর্ণ হয়, তা জাতির কাম্য নয়।
বিএনপি যে কারণেই এমন অবস্থান নিক না কেন, দলটির নেতাদের এমন বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের অন্তত দুজন সমন্বয়ক ও উপদেষ্টা নাহিদের বিবৃতি অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও বঙ্গভবনের বাইরের আন্দোলনকারীদের থমকে দিয়েছে।