সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড চায় না নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে লেখা চিঠিতে এইচআরডব্লিউ এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এ প্রত্যাশার কথা জানান।
এর আগে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনার কথা চিঠিতে তুলে ধরেছে এইচআরডব্লিউ। অতীতের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিলসহ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
চিঠিতে সংস্থাটি আরো বলেছে, শেখ হাসিনাসহ আরো অনেকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। মৃত্যুদণ্ডব্যবস্থা বিলোপ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চললে ভারতসহ অন্য দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশে বিচারপ্রক্রিয়াকে সমর্থন জানানো এবং প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে চলা।
এইচআরডব্লিউয়ের এশিয়াবিষয়ক গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জুলাই ও আগস্টের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময় ব্যাপক নিপীড়নের জন্য সে সময় আদেশ দেওয়ার দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনাসহ অন্যদের ভূমিকা তদন্ত করা উচিত।
জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, ‘সুষ্ঠু বিচার কেবল জবাবদিহিপ্রক্রিয়া শক্তিশালী করবে না, বরং এটি অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারগুলোকেও প্রকৃত ন্যায়বিচার পাওয়ার একমাত্র উপায়।’
এইচআরডব্লিউয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিচার যাতে সুষ্ঠু হয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী প্রয়োজন। এইচআরডব্লিউ বলেছে, বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত মৃত্যুদণ্ডব্যবস্থা স্থগিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার পদক্ষেপ নেওয়া।
এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউ বলেছে, এটি আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করতে পারে। তাই কোনো দলকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করলে সে ক্ষমতা মন্ত্রী বা নির্বাহী শাখা নয়, বরং আদালতের কাছে থাকা উচিত। আর ন্যায্য শুনানির মাধ্যমে তা প্রয়োগ করা উচিত।