বাংলাদেশের নারীরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন করে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই এই দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক মিলি আক্তার মোবাইলে ময়মনসিংহের নান্দাইলের গ্রামের বাড়িতে বাবা সামছুল হককে ফোন করে বলেন, ‘আব্বা আম্মারে কও আমরা জিইত্যালছি, অহন আমরারে সরকার অনেক পুরস্কার দিব। অহন আর তোমারার কষ্ট করার লাগত না আর বাজারে গিয়া তোমার কলাও বেচন লাগত না। খুব তাড়াতাড়ি বাড়িত আইতাছি।’
গত বৃহস্পতিবার সাফ নারী ফুটবলের সদস্য হয়ে নেপাল থেকে দেশের বিমানবন্দরে নেমেই কলা বিক্রেতা বাবাকে ফোন করে প্রথমে খুশির সংবাদ এভাবেই জানান দেন।
জানা যায়, গত বুধবার নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশের নারীরা। টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বারইগ্রামের হতদরিদ্র সামছুল হকের মেয়ে মিলি আক্তার।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে মিলির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মা আনোয়ারা বেগম সরকারের দেয়া আশ্রয়ণের ঘরটি পরিষ্কার করছেন।
গত দুই দিনে গ্রামের মানুষকে তাঁর মেয়ের খুশির খবরটি দিয়েছেন। মিলির খবরে প্রতিবেশীরাও বেজায় খুশি। বাবা সামছুল হক বলেন, ‘গতকাইল (বৃহস্পতিবার) বিহালে মোবাইলে ছেঁড়িডা ফোন দেয়। কিছু জিগানোর আগেই হে খুশিতে কয় আব্বা তোমার দোয়া কামে লাগজে। আমরা জিতছি।’
মা আনোয়রা বেগম জানান, তাঁর চার মেয়ে ও দুই ছেলে। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। সরকারের দেয়া ঘরে বসবাস করেন। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
আর মিলিকে নিয়েই থাকেন। অনেক কষ্ট করে মিলিকে লালন-পালন করেছেন। এলাকার একজনের কাছে তাঁর মেয়ে ফুটবল খেলা শিখেছে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার নেশা ছিল। বর্তমানে মিলি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী দলে খেলছেন। সেখান থেকেই মিলি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন।
মিলির স্থানীয় কোচ মো. দোলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। তিনি জানান, স্কুল পর্যায়ে খেলায় তিনি মিলির খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এর পরপরই তিনি তাঁকে দলে টেনে নেন। নিজের মতো করে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর প্রতিভা দেখে অনেকেই প্রসংশা করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সুযোগ পেয়েই মিলি বাজিমাত করেন।