ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:১৭
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ৫, ২০২৪

১৫ টাকা কেজির আলু যেভাবে হয়ে যাচ্ছে ৬৫ টাকা

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ফসল আলু। প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুতেই এই সবজির উৎপাদন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। এ সময় কৃষকরা মাঠ থেকে এক কেজি আলু বিক্রি করেন মাত্র ১৪-১৫ টাকায়। গত জুনে হঠাৎ করেই আলুর বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।

অক্টোবরের শেষে পাইকারিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন খুচরা পর্যায়ে এক কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। এমন অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত হিমাগার মালিক, মজুতদার ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কালাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায়।

জানা যায়, ফেব্রুয়ারি-মার্চে কৃষকরা মাঠ থেকে আলু উত্তোলন করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছে তা বিক্রি করে দেন। এসব আলু মজুত করতে হিমাগারে রাখা হয়।

একবার আলু হিমাগারে চলে গেলে বছরের জুন মাস থেকে বাজারে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দেন মজুতদাররা। এ কৌশল অবলম্বন করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা আলুর দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।

অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। কালাই উপজেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা যায়, কার্ডিনাল, গ্র্যানুলা, ডায়মন্ড জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়, আর দেশি পাকড়ি লাল জাতের আলু ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অথচ হিমাগার গেটে এই আলু পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়। এটি ইঙ্গিত করে যে, বাজার নয় বরং হিমাগারের গেটেই চলছে দাম বাড়ানোর আসল কারসাজি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জয়পুরহাটে ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৩ টন।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ সর্বোচ্চ পড়ে সাড়ে ১১ টাকা। পরিবহন ও হিমাগার খরচ যুক্ত করলেও প্রতি কেজিতে দাম সর্বোচ্চ ২০ টাকা হওয়া উচিত। অথচ খুচরা বাজারে সেই আলুর দাম ৬৫ চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি।

কালাই উপজেলার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই মাঠের আলু সব বিক্রি করেছি ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই আলু বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে, অথচ এই লাভের অংশ কৃষকরা পান না।’

আলুর এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি শুধু কৃষক ও ক্রেতাদের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর সাধারণ ক্রেতাদের প্রতিকেজি আলু কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। এতে করে শুধু মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে, যারা মূলত হিমাগারে আলু মজুত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকরা মনে করেন, বাজারের অস্থিরতা কমাতে হিমাগারে অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি।

কালাইয়ের আলু ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

স্থানীয় আড়তদাররা মনে করেন, হিমাগারের গেটে সিন্ডিকেটের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আলুর দাম সহনশীল রাখা সম্ভব হবে।

কালাইয়ের আরেক কৃষক মোক্তাদির রহমান বলেন, ‘সরকারিভাবে যদি কৃষকদের মজুত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার সুযোগ কমবে, আর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের প্রকৃত মূল্য পাবে।’

পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, ‘এবার এই হিমাগারে ৬০ কেজি ওজনের ২ লাখ ৮৫ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ হয়েছিল। এখনও হিমাগারগুলোতে গড়ে সংরক্ষণের ২৩-২৫ শতাংশ আলু রয়েছে।’

হিমাগারে আলু সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কম-বেশি সব হিমাগার মালিকই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা পারতপক্ষে অক্টোবরের মধ্যে সব আলু বিক্রি করেন। বর্তমানে যে পরিমাণ আলু হিমাগারে আছে তা ব্যবসায়ীদের।’

জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘হিমাগারে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু আছে। তবুও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে, যা অন্যায়। সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে সংকট সহজেই নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী হিমাগার খরচ ও পরিবহন খরচ ধরলে প্রতি কেজি আলুর খরচ সর্বোচ্চ ২০ টাকা। বাজার তদারকির মাধ্যমে এই সংকট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram