ভূমিধস জয় পেলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত। একই সঙ্গে কমপক্ষে ১২০ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড প্রথম মেয়াদের পর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এর চার বছর পর নির্বাচন করে ১৮৯২ সালে তিনি জয়ী হন। সেই রেকর্ড ভেঙে ১২০ বছর পরে হোয়াইট হাউসের চাবি হাতে আসছে ট্রাম্পের। একই সঙ্গে তিনি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পর নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। এই জয়ের জন্য তিনি যেমন মার্কিনিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তেমনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন আরব মার্কিনিদের।
ধারণা করা হয়, গাজা যুদ্ধের কারণে ডেমোক্রেটদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন মুসলিমরা। তারা এবার ব্যাপকভাবে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তবে এদিন তিনি বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি। তার জয়ে রিপাবলিকান শিবিরে আনন্দের বন্যা। অন্যদিকে ডেমোক্রেট শিবিরে পিনপতন নিস্তব্ধতা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমালা হ্যারিসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি এখনও পরাজয় স্বীকার করে নেননি। ডেমোক্রেট দল থেকে দেয়া হয়নি কোনো বিবৃতি। জনমত জরিপ এবং বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস ধোপে টিকলো না। যেখানে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বলাবলি হচ্ছিল নির্বাচন নিয়ে ‘ডেডলক’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। খুব সামান্য ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে। সেখানে মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় দুপুর নাগাদ) খবর চলে আসে ট্রাম্প জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যে ধারায় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাচ্ছিলেন তাতে তার ধারেকাছে দাঁড়াতেই পারছিলেন না ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিস। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর একটার দিকে ট্রাম্প যখন ফ্লোরিডার পাম বিচে কনভেনশন সেন্টারে দলীয় সমর্থক, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন কমালা হ্যারিসের ডেমোক্রেট শিবির নিস্তব্ধ। পূর্ব পরিকল্পিত ভাষণ বাতিল করেন কমালা। নির্ধারিত ২৭০ মাইলফলক স্পর্শ করে আরো দূরে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প। তিনি জিতেছেন ২৭৭ টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। তার কাছে কুপোকাত হয়েছেন ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস। তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ২২৬ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প দুইবার দুইজন ডেমোক্রেট নারী প্রার্থীকে ধরাশায়ী করলেন। ২০১৬ সালে তার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় ডেমোক্রেট নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আর এবার পরাজিত হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস। চার বছর পরে আবার ট্রাম্পের হাতে উঠতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের চাবি। এরই মধ্যে তিনি ফ্লোরিডার পাম বিচে দলীয় নেতাকর্মীদের কনভেনশন হলে পৌঁছে ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি মার্কিনিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিজেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। দলীয় সমর্থকদের ব্যাপক করতালির মধ্য দিয়ে তিনি মঞ্চে আরোহন করেন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, রানিংমেট জেডি ভ্যান্স, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, ছেলে ব্যারন ট্রাম্প প্রমুখ। প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে তা সারিয়ে তুলতে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি মেলানিয়া ট্রাম্পকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেন। এ সময়ই তিনি মেলানিয়াকে ফার্স্টলেডি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে ধন্যবাদ জানান। মেলানিয়া একটি বই লিখেছেন। সেটা দেশে অন্যতম বেস্টসেলার হয়েছে বলে তার প্রশংসা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সে একটি মহান কাজ করেছে। জনগণকে সহায়তা করার জন্য সে কঠোর কাজ করে। নিজের সন্তানদের ‘অ্যামেজিং চিলড্রেন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প। তিনি এ সময় প্রতিশ্রুতি দেন সীমান্ত সমস্যা সমাধান করার। তিনি আরও বলেন, তিনি এবং তার দল আরও একবার ইতিহাস রচনা করেছেন। এ জয়কে তিনি ‘ম্যাগনিফিসেন্ট ভিক্টরি’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প বলেন, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী যুগের সূচনা হলো। তিনি বলেন, এই বিজয় মার্কিন জনগণের। এর ফলে আমরা আবার আমেরিকাকে গ্রেট করে গড়ে তুলতে পারবো। এ সময় সমর্থকদের স্লোগানে ফেটে পড়ছিল কনভেনশন সেন্টার। তার মাঝেই ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে অপ্রত্যাশিত ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় পাশে থাকার জন্য এক্সের মালিক ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে তিনি রিপাবলিকান দলের ‘নতুন তারকা’ আখ্যায়িত করেন। ট্রাম্প বলেন, প্রচারণাকালে দু’বার হত্যাচেষ্টা থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন। তিনি রক্ষা পেয়েছেন একটি কারণে। ট্রাম্প বলেন, হোয়াইট হাউসে তিনি প্রতিটি কাজে উৎসাহ ও লড়াই নিয়ে আসবেন। বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সরকার চালাবেন তার ঘোষণা- ‘প্রমিজেস মেইড, প্রোমিজেস কেপ্ট’ নীতি অনুযায়ী।