এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তার দল রিপাবলিকানরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে এর নিয়ন্ত্রণ ছিল ডেমোক্রেটদের হাতে। কমপক্ষে ১২০ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন ট্রাম্প। তার এই ভূমিধসের জয়ের পর গোটা বিশ্বের রাজনীতিতে যে একটা পরিবর্তন আসবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে দেখার বিষয় সেই পরিবর্তনটা কোন পথে যায় এবং কীভাবে হয়। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে শুরু হওয়া মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতি কোন পথে প্রবাহিত করবেন ট্রাম্প, সেটা এখন অতি মূল্যবান প্রশ্ন। নির্বাচিত হওয়ার আগে ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি থাকলে পৃথিবীতে কোনো যুদ্ধই হতো না। ইসরাইলকে জো বাইডেন প্রশাসনের প্রশ্নহীন সমর্থন তাদের দলের ভরাডুবির বড় একটা কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্পের ভূমিকা কি হবে তা দেখার বিষয়।
বিবিসি’র এক খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুর মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও গাজায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাগোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ কীভাবে শেষ করবেন তা উল্লেখ করেননি ডনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার বাহিরে থাকাকালীন ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি যদি জো বাইডেনের জায়গায় থাকতেন তাহলে হামাস কখনই ইসরাইলে হামলা চালাত না। কেননা ইরানের উপর তার ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি প্রয়োগের ফলে ইরান হামাসকে অর্থায়ন করার সুযোগ পেত না।
এক্ষেত্রে এই ধারণা করা যায় যে, সম্ভবত ট্রাম্প সেই নীতিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ক্রমাগত চাপে রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি ট্রাম্পের। ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ট্রাম্প। সেসময় ওয়াশিংটন ইরানের বিরুদ্ধে বৃহত্তর পরমাণু নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া ট্রাম্পের শাসনামলে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ইসরাইলপন্থী নীতি শক্তিশালীভাবে প্রণয়ন করেন। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে নামকরণ করেন এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করে জেরুজালেমে নিয়ে যান।
এবারের নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে মোটেও দেরি করেননি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি ট্রাম্পকে ‘সবচেয়ে ভাল বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউসের প্রকৃত ভালো বন্ধু হচ্ছে ইসরাইল’।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন ট্রাম্পের নীতি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বেশ কার্যকর ছিল। ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট করেছিল, কেননা ওয়াশিংটন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় জীবনকে আঘাত করেছে।
ট্রাম্পের নীতি ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল। যারফলে উভয় পক্ষকেই দীর্ঘ সংঘাতের পথে ঠেলে দেয়া হয়। ভূখণ্ডের লড়াইয়ে উভয় দলই তাদের শক্তি ক্ষয় করেছে।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বেশ কয়েকবার বলেন তিনি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের অবসান চান। নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের মেরূকরণ কিছুটা জটিল যা মাঝেমধ্যে অকার্যকর সম্পর্কে পর্যবসিত হয়। তবে ট্রাম্প চাইলে অবশ্যই ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক রয়েছে। এখন দেখার বিষয় তিনি কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে কাজ করবেন। যদিও এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়।