বিশ্বের ১২১টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। চলতি মাসের শুরুতে বাতাসের মানসূচকে এমন তথ্য উঠে আসে। শুধু বায়ুদূষণ নয়, গত দুই দশকে বাংলাদেশের নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তা ছাড়া নিয়ম না মেনে হাজার হাজার ইটভাটা দেশে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।
তবে পরিবেশদূষণ বাড়লেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মূলত আইনের বাধায় সরাসরি কোনো ব্যক্তি পরিবেশ সুরক্ষায় মামলা করতে পারেন না। এতে দেশের তিনটি পরিবেশ আদালত থাকলেও সেখানে এ আইনে পর্যাপ্ত মামলা নেই।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুর হক বলেন, প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এখানে দোষীদের তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হয়, যা মানুষের মধ্যে অনেক বেশি প্রভাব পড়ে। আর মামলা করলে তার দীর্ঘ প্রক্রিয়া থাকে। যে কারণে মামলার সংখ্যা কম। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত আইনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি মামলা করতে পারবেন। আইনজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ আদালতে মামলা কম হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো সরাসরি মামলার সুযোগ না থাকা। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পরিবেশ আদালতে সাধারণ মানুষ অথবা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সরাসরি মামলা করতে পারে না। কেউ মামলা করতে চাইলে প্রথমে অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়।
প্রতিকার না পেলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে মামলা করতে পারেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সাত ধারায় বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের ব্যত্যয় করছেন, তাহলে ক্ষতি নির্ধারণ করে তা পরিশোধের নির্দেশ দিতে পারবেন। ক্ষতিপূরণ না দিলে মহাপরিচালক আদালতে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন। এ নির্দেশ অমান্য করলে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।
ঢাকার পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ সালে। এ আদালতে বর্তমানে ১১৪টি মামলা বিচারাধীন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আইনের ১০০ মামলা মুলতবি রয়েছে। এই আদালতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এ পর্যন্ত ৫৭৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ১০টি মামলা বিচারাধীন। এ আদালতে ২০০৪ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৯২টি মামলার আপিল হয়।
তবে ২০১৪ ও ২০২১ সালে কোনো মামলায় আপিল হয়নি। ২০০৪ সালে একটি, ২০০৫ সালে তিনটি ২০০৬ সালে দুটি, ২০০৭ সালে আটটি, ২০০৮ সালে পাঁচটি ২০০৯ সালে ১১টি, ২০১০ সালে ১১টি, ২০১১ সালে একটি, ২০১২ সালে দুটি, ২০১৩ সালে পাঁচটি, ২০১৫ সালে একটি, ২০১৬ সালে চারটি, ২০১৭ সালে চারটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি, ২০১৯ সালে একটি, ২০২০ সালে সাতটি, ২০২২ সালে আটটি, ২০২৩ সালে আটটি ও চলতি বছরে পাঁচটি মামলায় আপিল হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তামান্না খানম আইরিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। এতে তুলনামূলকভাবে মামলা কম হয়। জরিমানার সঙ্গে জেল দিলে, মানুষের সচেতনতা আরো বাড়বে। তাই এই আইনটি সংশোধন করে যুগোপযোগীভাবে আরো কঠোর করা উচিত। পরিবেশ সুরক্ষায় আইনের পাশাপাশি সবাইকে আরো সচেতনও হতে হবে। সঠিকভাবে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে পারলে পরিবেশদূষণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে।
ঢাকার পরিবেশ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বাদল বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে মামলা এলে সহযোগিতা করা। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলার বিষয়ে অনুমোদন করে, যে কেউ চাইলেই মামলা করতে পারেন না। তা ছাড়া মোবাইল কোর্ট তাৎক্ষণিক জরিমানা করায়, তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। যে কারণে এই আইনে মামলার সংখ্যা কম।’