ঢাকা
২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৪৮
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৭, ২০২৪

মিসরের ইসলামী গবেষণা একাডেমির প্রস্তাবিত সংবিধান

২৫ মহররম ১৩৯৮ হিজরি, ৫ জানুয়ারি ১৯৭৮ মিসরের তৎকালীন গ্র্যান্ড শায়খ আবদুল হালিম মাহমুদ এক বিশেষ অর্ডার জারি করেন। এই অর্ডারের আওতায় ইসলামী গবেষণা একাডেমির একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল একাডেমির অষ্টম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ অনুযায়ী একটি ইসলামী সংবিধান প্রণয়ন করা। আল-আজহারের গ্র্যান্ড শায়খসহ ইসলামী ফিকহ ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা এই সংবিধান প্রণয়ন করেন। পরে শায়খ এই সংবিধানের দলিল তৎকালীন দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেন।

সেই প্রস্তাবিত সংবিধান বাংলায় রূপান্তর করেছেন মুফতি মাহমুদ হাসান

মিসরের ইসলামী গবেষণা একাডেমির প্রস্তাবিত সংবিধান ৯টি অধ্যায়ে বিভক্ত, যাতে ৯৩টি ধারা আছে। এর বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তভাবে নিচে দেওয়া হলো—

অধ্যায়-২ : ইসলামী সমাজের ভিত্তি, ১৩টি ধারা

অধ্যায়-৩ : ইসলামী অর্থনীতি, ১০টি ধারা

অধ্যায়-৪ : ব্যক্তি অধিকার ও স্বাধীনতা, ১৬টি ধারা

অধ্যায়-৫ : ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধান, ১৭টি ধারা

অধ্যায়-৬ : বিচারব্যবস্থা, ২২টি ধারা

অধ্যায়-৭ : শুরা ও পর্যবেক্ষণ, ২টি ধারা

অধ্যায়-৮ : সরকার, ২টি ধারা

অধ্যায়-৯ : সাধারণ ও স্থানান্তরযোগ্য বিধান, ৭টি ধারা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ধারা-১ :

(ক) মুসলমানরা একটি অভিন্ন জাতি।

(খ) শরিয়া হবে সব আইনের উৎস।

ধারা-২ : ইসলামী জাতির মধ্যে একাধিক জাতি থাকতে পারে এবং তাদের শাসনব্যবস্থার ধরন ভিন্ন হতে পারে।

ধারা-৩ : একটি রাষ্ট্র এক বা একাধিক ইসলামী জাতিরাষ্ট্রের সঙ্গে এমনভাবে একত্র হতে পারবে, যা তাদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

ধারা-৪ : জনগণ ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধান, তাঁর সহকারীদের এবং অন্য শাসকদের শরিয়ার বিধান অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহির আওতায় রাখবে।

ধারা-৫ : সহযোগিতা ও সম্পূরকতা সমাজের মূল ভিত্তি।

ধারা-৬ : সৎ কাজের নির্দেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ বাধ্যতামূলক; এবং সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা তা পালন করে না তারা অপরাধী বলে গণ্য হবে।

ধারা-৭ : পরিবার সমাজের মূল ভিত্তি; এর ভিত্তি ধর্ম ও নৈতিকতা। রাষ্ট্র পরিবারকে সমর্থন দেবে, মাতৃত্বের সুরক্ষা করবে এবং শিশুর যত্ন ও এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

ধারা-৮ : পরিবার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা বিবাহকে উৎসাহিত করবে এবং এর আর্থিক দিক সহজ করতে বসতি প্রদান ও সম্ভাব্য সহায়তা করবে। বিবাহিত জীবনকে সম্মানজনক করবে এবং নারীর দায়িত্ব পালন ও সন্তান প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরিবার রক্ষা রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব।

ধারা-৯ : জাতির নিরাপত্তা ও ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য বিনা মূল্যে প্রতিরোধমূলক ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে।

ধারা-১০ : জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক এবং শিক্ষা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

ধারা-১১ : প্রতিটি স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে দ্বিনি শিক্ষাকে মৌলিক বিষয় হিসেবে রাখা হবে।

ধারা-১২ : রাষ্ট্র মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করবে এবং এর মধ্যে ফরজ বিষয়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী এবং খলিফাদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা শিক্ষার ধারাবাহিকতায় সঠিকভাবে শেখানো হবে।

ধারা-১৩ : রাষ্ট্র মুসলমানদের জন্য কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করবে এবং শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য কোরআনের হিফজব্যবস্থা চালু রাখবে। কোরআন শিক্ষার জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে, পবিত্র কোরআন মুদ্রণ করবে এবং এর প্রচার-প্রসারে সহায়তা করবে।

ধারা-১৪ : বেপর্দা থাকা নিষিদ্ধ এবং পর্দা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্র শরিয়ার বিধান অনুযায়ী অশ্লীলতা রোধে আইন ও সিদ্ধান্ত জারি করবে।

ধারা-১৫ : আরবি ভাষা রাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা হবে এবং সরকারি নথিপত্রে হিজরি তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

ধারা-১৬ : রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের মঙ্গলের সঙ্গে শর্তাধীন, বিশেষ করে ধর্ম, বিবেক, জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা।

ধারা-১৭ : শুধু লক্ষ্যে বৈধ হওয়া যথেষ্ট নয়; বরং সব ক্ষেত্রে মাধ্যমগুলোও শরিয়ার বিধান অনুযায়ী হতে হবে।

ধারা-১৮ : অর্থনীতি শরিয়ার নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে, যা মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। এতে চিন্তা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনযাপনের গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং বৈধ উপার্জন সুরক্ষিত থাকবে।

ধারা-১৯ : বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকবে, তবে তা শরিয়ার সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

ধারা-২০ : রাষ্ট্র শরিয়ার নীতি অনুসারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

ধারা-২১ : রাষ্ট্র একচেটিয়া মজুদদারি প্রতিরোধ করবে এবং শুধু প্রয়োজনবোধে মূল্য নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করবে।

ধারা-২২ : মরুভূমি আবাদ এবং চাষযোগ্য ভূমির পরিধি বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্র উৎসাহ প্রদান করবে।

ধারা-২৩ : সুদ গ্রহণ বা প্রদান বা কোনো লেনদেনে সুদের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না।

ধারা-২৪ : ভূগর্ভস্থ খনিজ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের মালিকানা থাকবে।

ধারা-২৫ : যার কোনো মালিক নেই, এমন সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে। আইন দ্বারা এর ব্যক্তিগত মালিকানার পদ্ধতি নির্ধারিত হবে।

ধারা-২৬ : রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রদানকৃত জাকাত গ্রহণ করবে এবং তা বৈধ ক্ষেত্রে বণ্টন করবে।

ধারা-২৭ : জনকল্যাণে ওয়াকফ-দান বৈধ এবং এর সব দিক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করা হবে।

ধারা-২৮ : ন্যায় ও সাম্য রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি; এবং প্রতিরক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তির অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। এই অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

ধারা-২৯ : ধর্ম ও চিন্তার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা (মৌখিক, ইঙ্গিত বা অন্য উপায়ে), সংগঠন গঠন এবং এতে যোগদানের অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, স্থানান্তর ও সমাবেশের স্বাধীনতা—এগুলো সবই মৌলিক অধিকার, যা শরিয়ার সীমার মধ্যে রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।

ধারা-৩০ : ব্যক্তিগত বাসস্থান, চিঠিপত্র এবং গোপনীয়তার অধিকার থাকবে; এবং এতে গুপ্তচরবৃত্তি নিষিদ্ধ। আইন দ্বারা এই অধিকারগুলোর ওপর কেবল গুরুতর অপরাধ বা জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যাবে, যা কেবল বিচারিক অনুমোদন সাপেক্ষে হতে পারে।

ধারা-৩১ : দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে চলাচলের স্বাধীনতা থাকবে এবং নাগরিকদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়া যাবে না। কোনো নাগরিককে নির্দিষ্ট স্থানে থাকতে বাধ্য করা যাবে না, যদি না তা আদালতের রায় দ্বারা হয় এবং রায়ে কারণ উল্লেখ করা থাকে। নাগরিকদের নির্বাসিত করা যাবে না।

ধারা-৩২ : রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যর্পণ নিষিদ্ধ এবং সাধারণ অপরাধীদের প্রত্যর্পণ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে।

ধারা-৩৩ : ব্যক্তির প্রতি যন্ত্রণা প্রদান একটি অপরাধ এবং এই অপরাধ বা তার শাস্তি অপরাধীর জীবদ্দশায় বাতিল হবে না। অপরাধীর মালিকানাধীন সম্পত্তি দ্বারা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে এবং যদি এটি সরকারি কর্মচারীর যোগসাজশে বা তার অনুমোদনে ঘটে, তাহলে তিনি অপরাধে দায়ী হবেন এবং তাঁর সঙ্গে সরকারও যৌথভাবে দায়ী থাকবে।

ধারা-৩৪ : যে কর্মচারীর অধিক্ষেত্রে নির্যাতন ঘটে এবং তিনি তা জানার পরও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানান, তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

ধারা-৩৫ : ইসলামে কোনো ব্যক্তির রক্ত বৃথা যেতে পারে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো অজানা হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা এবং অজ্ঞাত কারণে অক্ষম হওয়া ব্যক্তিদেরও সুরক্ষা প্রদান করা।

ধারা-৩৬ : প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার রয়েছে যেকোনো অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো, তা নিজের বা অন্যের বিরুদ্ধে অথবা সরকারি সম্পদ চুরি বা অপচয় সম্পর্কে।

ধারা-৩৭ : কর্ম, উপার্জন ও সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, যা শুধু শরিয়ার বিধানের অধীনে সীমাবদ্ধ করা যাবে।

ধারা-৩৮ : নারীদের কাজ করার অধিকার থাকবে, তবে তা শরিয়ার সীমার মধ্যে হতে হবে।

ধারা-৩৯ : রাষ্ট্র মালিকানা ও সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করবে এবং সাধারণভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে বাজেয়াপ্তকরণ কেবল বিচারিক রায়ের মাধ্যমে হতে পারে।

ধারা-৪০ : জনস্বার্থে ও পূর্ণ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে কেবল আইনের মাধ্যমে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে।

ধারা-৪১ : পত্রিকা প্রকাশের অধিকার রয়েছে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে, তবে তা শরিয়ার সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

ধারা-৪২ : নাগরিকদের সংগঠন ও সমিতি গঠনের অধিকার রয়েছে। তবে কোনো সংগঠনকে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না, যা সমাজের নিয়মবিরুদ্ধ, গোপন সামরিক কার্যক্রম সম্পর্কিত বা শরিয়াবিরোধী।

ধারা-৪৩ : সকল অধিকার শরিয়ার নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে চর্চা করতে হবে।

ধারা-৪৪ : রাষ্ট্রের একজন ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) থাকবে এবং তাঁকে অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক, যদিও মতবিরোধ থাকুক।

ধারা-৪৫ : আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই; ইমামের নির্দেশ যদি শরিয়ার বিপরীত হয়, তবে তা মান্য হবে না।

ধারা-৪৬ : ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ বায়াতের প্রক্রিয়া আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। সাধারণ বায়াত বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে হবে এবং এতে অংশগ্রহণকারী ভোটের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা বায়াত সম্পন্ন হবে।

ধারা-৪৭ : রাষ্ট্রপ্রধান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য ইসলাম, পুরুষত্ব, প্রাপ্তবয়স্কতা, সুস্থ মস্তিষ্ক, চরিত্রের উন্নতি এবং শরিয়ার বিধান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

ধারা-৪৮ : সব শ্রেণির জনগণের সাধারণ বায়াতের মাধ্যমে আইন অনুসারে ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) নিয়োগ করা হবে। নারীরা যদি নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে, তাহলে তাদেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার থাকবে।

ধারা-৪৯ : ইমামের বায়াত সম্পন্ন হওয়ার আগে কেউ ইমামের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করলে তাকে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।

ধারা-৫০ : বায়াত প্রদানকারীদের অধিকার থাকবে ইমামকে সরানোর; যদি তার কারণ পাওয়া যায় এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

ধারা-৫১ : ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) বিচার বিভাগের অধীন থাকবেন এবং তিনি বিচার বিভাগে নিজের প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হতে পারবেন।

ধারা-৫২ : রাষ্ট্রপ্রধানের নাগরিকদের সব অধিকার থাকবে এবং তিনি তাদের মতোই আইন মেনে চলবেন; তাঁর আর্থিক বিষয়ে আইন দ্বারা নির্ধারিত বিধান প্রযোজ্য হবে।

ধারা-৫৩ : ইমামের জন্য বা তাঁর চতুর্থ প্রজন্ম পর্যন্ত কোনো আত্মীয়ের জন্য উত্তরাধিকার, দান বা স্থাবর সম্পত্তি নিবেদনের অধিকার নেই। রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা বা ভাড়া নেওয়া যাবে না এবং রাষ্ট্রকেও তাঁর সম্পত্তি কেনা বা ভাড়া দেওয়া নিষিদ্ধ।

ধারা-৫৪ : ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রদত্ত উপহার উৎকোচ বলে বিবেচিত হবে এবং তা রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে।

ধারা-৫৫ : ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) ন্যায় ও কল্যাণে জনগণের জন্য আদর্শ হবেন এবং মুসলিম নেতাদের সঙ্গে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করবেন। প্রতিবছর তিনি একটি প্রতিনিধিদলকে হজে পাঠাবেন এবং মুসলিম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

ধারা-৫৬ : ইমাম শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য তাঁর বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন, সীমান্ত রক্ষা করবেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন, শরিয়া অনুযায়ী শাস্তি কার্যকর করবেন এবং চুক্তি করবেন, যা অনুমোদিত হতে হবে।

ধারা-৫৭ : ইমামের দায়িত্ব হবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রচলিত রাখা এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা।

ধারা-৫৮ : ইমাম রাষ্ট্রের কর্মচারী নিয়োগ করবেন; তবে আইনের দ্বারা তাঁর এই দায়িত্ব অন্যদের মধ্যম পর্যায়ের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্পণ করতে পারবেন।

ধারা-৫৯ : শরিয়া নির্ধারিত ‘হুদুদ’-এর শাস্তি ছাড়া অন্য অপরাধে ক্ষমা করার অধিকার আইন অনুসারে হতে পারে। ইমাম বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অপরাধে শাস্তি মওকুফ করতে পারেন, ‘হুদুদ’ ও বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধ ছাড়া।

ধারা-৬০ : রাষ্ট্রে বিদ্রোহ, অস্থিরতা বা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে ইমাম জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারবেন, যা আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। তবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে তা সংসদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যদি সংসদ গঠিত না থাকে, তাহলে আগের সংসদকে আহবান করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ না করলে বাতিল হবে। এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা হবে, যা এই পদক্ষেপগুলোর প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও পদক্ষেপ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।

ধারা-৬১ : বিচার শরিয়ার বিধান অনুসারে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

ধারা-৬২ : সবাই বিচার বিভাগের সামনে সমান এবং কাউকে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে আলাদা করে বিচার করা যাবে না।

ধারা-৬৩ : বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা বা কোনো ব্যক্তিকে তার স্বাভাবিক বিচারকের সামনে বিচার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা-৬৪ : ইমাম বা শাসকের বিরুদ্ধে মামলা শুনতে আদালতকে বাধা দেওয়া যাবে না।

ধারা-৬৫ : সমস্ত রায় ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলে ঘোষণা ও কার্যকর করা হবে এবং বিচারক তাঁর রায়ে শরিয়ার বাইরে কোনো কিছু মানবেন না।

ধারা-৬৬ : রায় কার্যকর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব; রায় কার্যকরে বিলম্ব বা অবহেলা করা অপরাধ, যা শাস্তিযোগ্য।

ধারা-৬৭ : রাষ্ট্র বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করবে এবং এর ওপর হস্তক্ষেপ অপরাধ বলে গণ্য হবে।

ধারা-৬৮ : বিচার বিভাগের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের রাষ্ট্র নির্বাচিত করবে এবং তাঁদের কাজের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

ধারা-৬৯: সীমার অপরাধের ক্ষেত্রে আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক এবং সে নিজে একজন আইনজীবী নির্বাচন করতে পারবে; না পারলে রাষ্ট্র একজন আইনজীবী নিয়োগ করবে।

ধারা-৭০ : বিচারসভার কার্যক্রম উন্মুক্ত থাকবে এবং জনগণ তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে; তবে শরিয়া সমর্থিত বিশেষ কারণে গোপনীয় করার প্রয়োজন হলে তেমনটি করা যাবে।

ধারা-৭১ : ব্যভিচার, মিথ্যা অপবাদ, চুরি, ডাকাতি, মদপান ও ধর্মত্যাগের অপরাধের জন্য শরিয়া নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ধারা-৭২ : ‘হুদুদ’ তথা শরিয়া নির্ধারিত শাস্তি সীমার বাইরের অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে আইন দ্বারা বিচারক প্রদত্ত শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।

ধারা-৭৩ : আইন দ্বারা রক্তপণ সম্পর্কিত বিধান নির্ধারিত হবে এবং তবে তা শরিয়া নির্ধারিত ‘দিয়ত’ তথা রক্তপণের পরিমাণ অতিক্রম করতে পারবে না।

ধারা-৭৪ : তাওবা গ্রহণের শর্ত ও বিধান আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ধারা-৭৫ : কোনো অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষ সন্ধি বা মাফ করাকে অস্বীকার না করবে।

ধারা-৭৬ : হত্যার বিচারে মৃত্যুদণ্ড রহিতকরণের বিনিময়ে সন্ধি করার ক্ষেত্রে রক্তপণের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করা যাবে।

ধারা-৭৭ : নারী ও পুরুষের জন্য রক্তপণের পরিমাণ সমান হতে পারবে।

ধারা-৭৮ : আঘাতের ক্ষেত্রে প্রতিশোধের শর্ত হলো আঘাতের পরিমাণ ও তার বিচারিক নিশ্চিতকরণ।

ধারা-৭৯ : সাধারণ শাস্তির ক্ষেত্রে প্রহার মূল শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত থাকবে এবং কারাবাস কেবল সীমিত অপরাধে ও সীমিত সময়ের জন্য অনুমোদিত হবে।

ধারা-৮০ : আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন, অপমান বা তার মর্যাদায় আঘাত করা যাবে না।

ধারা-৮১ : শরিয়ার বিধান ও সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য পর্যালোচনার জন্য একটি সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে; এর অন্যান্য ক্ষমতা আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ধারা-৮২: অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধানের জন্য একটি মজলিস গঠন করা হবে, যার গঠন, কার্যক্রম এবং সদস্যদের বেতন আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ধারা-৮৩ : রাষ্ট্রের একটি শুরা পরিষদ থাকবে, যা নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করবে—

১. শরিয়ার বিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন।

২. রাষ্ট্রের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন ও চূড়ান্ত হিসাবের পর্যালোচনা।

৩. নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কাজের ওপর পর্যবেক্ষণ।

৪. মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োজনবোধে তাদের ওপর থেকে আস্থা প্রত্যাহার।

ধারা-৮৪ : আইন দ্বারা নির্বাচন ও সদস্য পদের যোগ্যতার শর্তাবলি নির্ধারিত হবে। শুরা সদস্যদের জন্য সম্মানজনক বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নির্ধারণ করা হবে এবং পরিষদ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

ধারা-৮৫ : সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং শরিয়ার স্বীকৃত স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে এবং রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি তাদের জবাবদিহি থাকবে।

ধারা-৮৬ : মন্ত্রীদের নিয়োগের শর্ত এবং তাঁদের জন্য নিষিদ্ধ কাজের তালিকা ও তাঁদের কার্যকালীন অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ধারা-৮৭ : (…) শহরটি দেশের রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হবে।

ধারা-৮৮ : রাষ্ট্রের পতাকা ও প্রতীক এবং প্রতীক সংক্রান্ত বিধান আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ধারা-৮৯ : আইন কার্যকর হবে তার প্রণয়নের তারিখ থেকে এবং এর আগের সময়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না, যদি না তা ব্যতিক্রম হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। এর জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। অপরাধমূলক বিষয়ে এই প্রক্রিয়ার ব্যতিক্রম অনুমোদিত নয়।

ধারা-৯০ : আইন প্রণয়নের দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে এবং গেজেটে প্রকাশের পরদিন থেকে এক মাস পর তা কার্যকর হবে, যদি না অন্য কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়।

ধারা-৯১ : রাষ্ট্রপ্রধান ও সংসদ উভয়ের অধিকার আছে সংবিধানের একটি বা একাধিক ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ার; এবং সংশোধনের প্রস্তাবে সংশোধনযোগ্য ধারাসমূহ এবং প্রস্তাবের কারণসমূহ উল্লেখ করা আবশ্যক। যদি সংসদ থেকে প্রস্তাব আসে, তাহলে কমপক্ষে সংসদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষর আবশ্যক।

যেকোনো অবস্থায় সংসদ সংশোধন প্রস্তাবের মূলনীতিটি নিয়ে আলোচনা করবে এবং তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। যদি প্রস্তাবটি বাতিল হয়, তাহলে পরবর্তী এক বছরের আগে সংশোধনের জন্য পুনরায় একই ধারার প্রস্তাব দেওয়া যাবে না।

যদি সংসদ সংশোধনের মূলনীতিতে সম্মতি প্রদান করে, তাহলে এই সম্মতির তারিখ থেকে দুই মাস পর সংশোধনযোগ্য ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদনের পর এটি জনগণের কাছে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে অনুমোদিত হলে তা গণভোটের ফলাফল ঘোষণার তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

ধারা-৯২ : এই সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগে প্রণীত সব আইন ও বিধি প্রযোজ্য ও কার্যকর থাকবে, তবে এই সংবিধানে নির্ধারিত নীতিমালা ও প্রক্রিয়া অনুসারে সেগুলো বাতিল বা সংশোধন করা যাবে। যদি সেগুলো শরিয়ার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়, তাহলে তা বাতিল করে এর পরিবর্তে শরিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে।

ধারা-৯৩ : গণ-রেফারেন্ডামে জনগণের অনুমোদনের তারিখ থেকেই এ সংবিধান কার্যকর হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram