ঢাকা
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:২৬
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১৭, ২০২৪

বিশ বছরেও পূর্ণতা পায়নি 'ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী'

গোপাল অধিকারী, ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: দেশভাগের পর উত্তর ভারতের কয়েকটি অঞ্চল থেকে কয়েকজন বেনারসি কারিগর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায় বসতির পর সেখানে তারা বেনারসি-কাতানসহ বেশ কয়েক ধরনের অভিজাত শাড়ি বোনার কাজ শুরু করেন। দেশের উত্তরাঞ্চলে কর্মরত কয়েক হাজার তাঁতির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, বেনারসি শিল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা করা এবং শিল্পের প্রসার ঘটাতে তাঁত বোর্ড ৯০ দশকে বেনারসি পল্লী প্রকল্পের পরিকল্পনা হাতে নেয়। ২০০০ সালে প্রকল্পের অধীনে 'ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী' নামকরণে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় ৫ দশমিক ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বেনারসি পল্লী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ। কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে চললেও পূর্ণতা পায়নি। বরং প্রকল্পটির জমিতে কারখানার পরিবর্তে এখন চলছে সবজি চাষ।

২০ বছরে প্লটের কিস্তি পরিশোধের সুবিধার্থে ৯০ তাঁতিকে ৯০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি ৩ শতাংশের এবং ২০টি ৫ শতাংশের প্লট। ৯০টি প্লটের মধ্যে মাত্র ৭টি প্লটে কারখানা স্থাপন করা হলেও এখন চালু রয়েছে চারটি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে এই ডিসেম্বরে তবুও কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি। প্লট নিয়ে কারখানা গড়ে তুলতে পারেনি বেশিরভাগ তাঁতি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পল্লীর অভ্যন্তরে বিশাল জায়গাজুড়ে ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, শিম, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে। কার্যালয়ের আশপাশে সাত-আটটি সবজির খেত দেখা গেছে। কার্যালয়ের জানালা দরজার কাচ ভাঙা, দেয়ালে রং ও পলেস্তারা চটে শ্যাওলা জমে আছে। চেয়ার-টেবিল নষ্টের উপক্রম। ময়লা ও পুরোনো আসবাবপত্র পড়ে আছে বারান্দায়। কার্যালয়ের চার দিকে রীতিমতো জঙ্গল হয়ে আছে। দূর থেকে ২-৩টি কারখানা দেখতে পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীতে মোট ৯০টি প্লট রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কারখানা গড়ে ওঠেনি। সর্বশেষ ৫টি কারখানা চালু হলেও এর মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি চারটি চালু আছে। কিন্তু নানা কারণে তাঁতের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঋণের বিপরীতে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ১৪টি প্লট বাতিল হয়েছে। আরও ২২টি প্লট বাতিলের পথে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

স্থানীয় তাঁতিদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সঠিক পরিকল্পনা, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষক ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে দুই দশকের এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখান থেকে তাঁদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও তাঁত শিল্পে তেমন বিকাশ ঘটেনি।

স্থানীয় সবজি চাষি এক নারী বলেন, 'এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা পল্লীর জায়গায় সবজি আবাদ করেছি। এ জন্য বছরে কিছু টাকা দিতে হয় মসজিদ উন্নয়নের জন্য।'প্রকল্পের একটি কারখানার তাঁতি শরিফুল ইসলাম জানান, এখনো স্থায়ী কারখানা গড়ে ওঠেনি। যে কয়টা কারখানা আছে, তাঁরা নিজ অর্থায়নে তৈরি করেছেন। তবে আর্থিক-সংকটের কারণে প্রায় সময় এগুলো বন্ধ থাকে।

ঈশ্বরদী বেনারসিপল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামাল বলেন, এখানকার বেনারসি শিল্প একসময় বেশ সমৃদ্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় বেনারসির চাহিদা কমে যাওয়া ও ভারতীয় কম দামি শাড়ি আসার কারণে এ শিল্প বর্তমানে ধ্বংসের পথে। পল্লীর প্রায় সব প্লট পর্যায়ক্রমে তাঁতিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পল্লীর প্লটগ্রহীতা কিস্তির টাকা পরিশোধ করেননি। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ কারখানাও গড়ে ওঠেনি। বরাদ্দ পাওয়া তাঁতিরা প্লটে কারখানা করবে এমন লক্ষণ দেখা যায় না। পুঁজির অভাবও রয়েছে তাঁদের। তাঁরা সরকারের ঋণের অপেক্ষায় আছেন।

শাহ জামাল জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তারপর হয়তো নতুন নিয়মে এগোবে প্রকল্পটি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram