২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই- অক্টোবর) সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এই চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা বা ৭.৯০ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এটি ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা বাস্তবায়ন হয়েছিল। সেই হিসেবে ৯ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা বা ৩০.৬৫ শতাংশ কমেছে।
গতকাল রবিবার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, গত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮.৯০ কোটি টাকা। আর মোট প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৩৫২টি।
গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারি তহবিল থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। চলতি অর্থবছরে এই ব্যয় কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তা খাত থেকে ব্যয় কমেছে ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। যদিও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ বেড়েছে ৯৫৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন সরকার সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অনেক অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। এ কারণে এই মুহূর্তে অনেক প্রকল্পে অর্থছাড়ও কম হচ্ছে। এর প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়নেও ধীর গতি দেখা দিয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ প্রবাহ বাড়বে।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাস জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবও এডিপি বাস্তবায়নে পড়েছে। একই পরিস্থিতি ছিল আগস্ট মাসে। আগস্ট মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু, আগস্ট মাস জুড়ে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়ে।
আবার দেশি-বিদেশি অনেক প্রকল্পের ঠিকাদার প্রকল্প এলাকায় না থাকার কারণে প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এছাড়া নতুন করে এডিপি অর্থছাড়ও কম করছে। সরকার শুধু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় করছে। অন্যদিক সরকার পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান প্রকল্পও নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে সেতু বিভাগ ব্যয় করছে মাত্র ১.১৪ শতাংশ অর্থ। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ব্যয় করছে বরাদ্দের ২.৪২ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ব্যয় করছে ২.০১ শতাংশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ২.৯৩ শতাংশ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪.৯৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫.৭৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৬.৭৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করছে ১৩.৯০ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ১০.৪৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২.৯০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯.৬৫ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০.৯১ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ১১.৫৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।